হামাসের সাথে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র, ভারতে নেতানিয়াহু কী বড় খেলা খেলতে চলেছেন, বিশ্ব অস্থির! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
গাজা এবং পাকিস্তানে এমন কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে যার জেরে ভারত ও ইসরায়েল বড় কোনো প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলির সাম্প্রতিক দাবি সেই প্রস্তুতির গভীরতা এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
সূত্রের খবর, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একের পর এক ইসরায়েলের প্রভাবশালী নেতা ভারতে আসছেন। এই হাই-প্রোফাইল সফরের সূচনা হবে নভেম্বরের প্রথম দিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সারের ভারত সফরের মাধ্যমে। এর ঠিক পরেই ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ভারতে আসতে চলেছেন। নেতানিয়াহুর পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সফর করবেন। এরপর ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হারজগও ভারতে আসবেন বলে জানা যাচ্ছে।
এই ঘন ঘন উচ্চপর্যায়ের সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন পাকিস্তান একযোগে ভারত এবং ইসরায়েল উভয়ের জন্যই নতুন করে হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অন্যদিকে, একাধিক ইউরোপীয় দেশ প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দিয়ে ইসরায়েলকে একঘরে করার চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই লাগাতার ভারত সফরকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে না।
আসলে, এর পেছনে মূল কারণ হিসাবে উঠে আসছে পাকিস্তান এবং হামাসের এক নতুন কৌশল। খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রধান শত্রু হামাসকে এখন পাকিস্তানে বসানো হচ্ছে। পাকিস্তানকে হামাসের নতুন আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি। এই পদক্ষেপটি ইসরায়েল এবং ভারত উভয়ের জন্যই গুরুতর ঝুঁকির কারণ। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা সংঘাতে ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু এখন সেই হামাসকেই কিছু সময়ের জন্য গাজা থেকে সরিয়ে পাকিস্তানে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে বলে জল্পনা। মনে করা হচ্ছে, এর পিছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ কয়েকটি মুসলিম ও পশ্চিমা দেশের হাত থাকতে পারে। অর্থাৎ, হামাসের কার্যকলাপকে সচল রাখার জন্য পাকিস্তানের ভূমিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য মিডিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (MEMRI) মধ্যপ্রাচ্য ফোরামের প্রকল্প পরিচালক আন্না মহজার-বার্দুচি এই বিষয়ে লিখেছেন যে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে পাকিস্তানে হামাসের বিশেষ প্রতিনিধি জাহিরের কার্যকলাপ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। তিনি হাই-প্রোফাইল অনুষ্ঠানগুলিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন, যেখানে প্যালেস্টাইন-পন্থী বক্তব্যকে জিহাদি নেটওয়ার্কিংয়ের সঙ্গে মেলানো হচ্ছে। ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর হামাসের হামলার ঠিক এক সপ্তাহ পরে, জাহির পেশোয়ারে একটি প্যালেস্টাইন-পন্থী সমাবেশে মন্তব্য করেছিলেন, যেখানে হামাস নেতা খালিদ মাশাল কার্যত যোগ দিয়েছিলেন। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, মাশাল প্যালেস্টাইনি জনগণের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থনের প্রশংসা করেছিলেন।
এর কয়েক সপ্তাহ পরে, ২ নভেম্বর, জাহির করাচিতে জমিয়ত উলেমা-এ-ইসলাম-ফজল (JUI-F)-এর প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান দ্বারা আয়োজিত ১২ দিনের প্রতিবাদ সমাবেশ ‘তুফান-এ-আকসা সম্মেলন’-এ কার্যত অংশ নেন। এই অনুষ্ঠানে, তৎকালীন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেছিলেন, “আমি পুরো মুসলিম উম্মাহকে সম্বোধন করছি। এই যুদ্ধ শুধুমাত্র প্যালেস্টাইনের জন্য নয়, এটি সমগ্র উম্মাহর জন্য।”
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি নেতৃত্বের ঘন ঘন ভারত সফর কি এই নতুন পাকিস্তান-হামাস চক্রান্তের মোকাবিলা করারই একটি অংশ? আগামী দিনগুলিতে এই সফরের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য এবং প্রভাব কী হতে চলেছে, তা জানতে চোখ রাখতে হবে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দিকে।