গরিবের ঘরের ‘ডাক্তার’ এই লতা! দূর করে ৭০টিরও বেশি রোগ, শুধু জানুন ব্যবহারের সঠিক উপায় – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

‘অমৃতা’ নামে পরিচিত এক আশ্চর্য ভেষজ: আপনার আশেপাশে সহজে দেখতে পাওয়া এই লতা বা বেলটি কিন্তু মোটেই সাধারণ নয়। আয়ুর্বেদে যাকে ‘অমৃতা’ নামে ডাকা হয়, সেই গিলয় (Giloy) হল অসংখ্য রোগের মহৌষধ। দেখতে অনেকটা পানের পাতার মতো হলেও, এর গুণাগুণ অবিশ্বাস্য। গাঁ-গঞ্জে সহজে মেলায় এটি ‘গরিবের ঘরের ডাক্তার’ হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু এই সহজলভ্য ভেষজটি কীভাবে ৭০-এর বেশি রোগ সারায়? আসলে এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে এমন কিছু উপাদান, যা আপনার শরীরকে ভেতর থেকে বদলে দিতে পারে।

রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের মহীরুহ

গিলয় হল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের ভান্ডার। এর পাতায় থাকে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ফসফরাস, যা এটিকে বাত, কফ ও পিত্ত নাশক করে তোলে। তবে এর মূল কারিশমা হলো এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর গুণ।

  • বিপজ্জনক জীবাণুর সঙ্গে লড়াই: গিলয়ে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান, যা শরীরকে রোগ-সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এটি লিভার ও কিডনি থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।
  • জ্বর নাশ করে দ্রুত: দীর্ঘদিনের বা পুরোনো জ্বর সারাতে গিলয় খুবই কার্যকর। এমনকি ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মতো মারাত্মক জ্বরেও এটি প্লেটলেট বাড়াতে সাহায্য করে। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় গিলয়ের রস ও মধু সমান পরিমাণে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল মেলে।
  • হজমশক্তি ও পেট সুস্থ রাখে: হজমের সমস্যা ও পেটের বিভিন্ন রোগ দূর করতে গিলয় বহুল প্রচলিত। এক গ্রাম গিলয়ের পাউডারের সঙ্গে সামান্য আমলকী পাউডার মিশিয়ে নিয়মিত খেলে হজম প্রক্রিয়া সুনিয়ন্ত্রিত থাকে। এমনকি অর্শ্ব (বواسীর) রোগের উপশমেও এটি ব্যবহার করা যায়।

অন্যান্য গুরুতর রোগেও গিলয়ের ভূমিকা

গিলয়ের কার্যকারিতা শুধু জ্বর বা হজমের সমস্যাতেই সীমাবদ্ধ নয়। এর রাসায়নিক বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, এতে গিলোইন, গ্লিস্টেরল, বারবেরিন অ্যালকেলাইড এবং উড়নশীল তেলের মতো মূল্যবান উপাদান রয়েছে, যা বিভিন্ন গুরুতর রোগে কাজ করে।

  • ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ: নিয়মিত গিলয়ের রস পান করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি রক্তচাপকেও স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
  • অ্যাজমা (হাঁজল): শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ এবং অতিরিক্ত কাশির মতো হাঁজলর লক্ষণ কমাতে গিলয়ের ব্যবহার খুব প্রচলিত।
  • ত্বক ও সৌন্দর্য: গিলয় ব্যবহার করলে মুখে কালো দাগ, ব্রণ ও বলিরেখা কমে, ত্বক থাকে সতেজ ও উজ্জ্বল।
  • রক্তস্বল্পতা ও টিবি: এটি রক্তকে পরিশুদ্ধ করে এবং শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, এটি ক্ষয় রোগের জীবাণুর বৃদ্ধিও রোধ করে।

যেভাবে ব্যবহার করলে পাবেন আরও উপকার

গিলয়ের ডালপালাও ঔষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বাতলেছেন:

  • দাঁতের সমস্যা: গিলয় ও বাবলা ফলি সমান পরিমাণে পিষে নিয়মিত দাঁত মাজলে আরাম মেলে।
  • খোরা রক্তক্ষরণ (রক্তপিত্ত): গিলয়, যষ্টিমধু ও কিশমিশ দিয়ে তৈরি কাঁচা বা শুকনো অংশ দিয়ে তৈরি করা রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত: গিলয় এবং আদা দিয়ে তৈরি কাঁচাক বা শুকনো অংশ দিয়ে তৈরি করা রস পুরোনো গেঁটে বাত সারাতে সাহায্য করে।
  • পাইলস (অর্শ্ব): মাঠার (ঘোল) সঙ্গে গিলয়ের গুঁড়ো মিশিয়ে পান করলে উপশম হয়।

এই ‘অমৃতা’ লতা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে বহু রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *