মহাভারতের যে গোপন কথা জানতেন না স্বয়ং ভীষ্ম! কৌরবদের পিতামহের ১০১ জন্ম আগের সেই ‘অজানা পাপ’ কী ছিল? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধে শরশয্যায় শায়িত ছিলেন কৌরবদের পিতামহ ভীষ্ম। শরীরে বিঁধে থাকা তীরগুলির সামান্য নড়াচড়াতেই অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর হচ্ছিলেন তিনি, রক্ত ঝরছিল অবিরাম। এই করুণ দশায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ।
যন্ত্রণায় কাতর ভীষ্ম কৃষ্ণকে দেখে জোরে হেসে ওঠেন এবং প্রশ্ন করেন, “আসুন জগতন্নাথ! আপনি তো সব জানেন। বলুন, আমি এমন কী পাপ করেছিলাম, যার শাস্তি এত ভয়াবহ হলো?”
উত্তরে শ্রী কৃষ্ণ বলেন, “পিতামহ, আপনার তো সেই ক্ষমতা আছে যে আপনি নিজের পূর্বজন্ম দেখতে পারেন। আপনি নিজেই তা দেখে নিতে পারেন।”
ভীষ্ম জানান, “দেবকীনন্দন! আমি তো একা শুয়ে সেই কাজটিই করছি। আমি শত জন্ম (১০০টি জন্ম) পর্যন্ত দেখেছি। কিন্তু এই ১০০ জন্মের মধ্যে আমি এমন কোনো কাজ করিনি, যার ফলস্বরূপ আমার সারা শরীর এভাবে বিদ্ধ হবে এবং প্রতিটি মুহূর্ত এমন তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে আসবে।”
শ্রী কৃষ্ণ তখন ভীষ্মকে আরও এক জন্ম অর্থাৎ ১০১তম জন্ম পেছনে ফিরে দেখতে অনুরোধ করেন।
ভীষ্ম তখন ধ্যানে মগ্ন হয়ে দেখেন, ১০১ জন্ম আগে তিনি এক নগরের রাজা ছিলেন। একবার তিনি সৈন্যদের একটি দল নিয়ে এক পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন এক সৈন্য এসে তাঁকে জানায়, পথে একটি সাপ শুয়ে আছে। তাদের দল যদি সেটির উপর দিয়ে যায়, তবে সাপটি মারা যাবে।
রাজা ভীষ্ম তখন নির্দেশ দেন, “তাকে একটি লাঠিতে জড়িয়ে ঝোপের মধ্যে ফেলে দাও।”
সৈনিক সেই মতোই সাপটিকে লাঠিতে জড়িয়ে একটি কাঁটাবনযুক্ত ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়। দুর্ভাগ্যবশত, সাপটি সেই কাঁটাযুক্ত ঝোপে আটকে যায়। যতবারই সে বের হওয়ার চেষ্টা করে, ততবারই তার শরীরে আরও বেশি করে কাঁটা বিঁধে যায়। রক্তক্ষরণ হতে থাকে। প্রায় ৫-৬ দিন ধরে যন্ত্রণায় ছটফট করার পর সাপটির মৃত্যু হয়।
ভীষ্ম তখন অত্যন্ত বিষাদের সঙ্গে শ্রী কৃষ্ণকে বলেন, “হে ত্রিলোকীনাথ! আপনি জানেন যে আমি ইচ্ছা করে এমনটা করিনি, বরং আমার উদ্দেশ্য ছিল সাপটিকে রক্ষা করা। তবে কেন এই ভয়াবহ ফল পেলাম?”
শ্রী কৃষ্ণ তখন ব্যাখ্যা করেন, “তাৎ শ্রী! আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কাজ করি বা ভুলবশত, কিন্তু কাজটি তো হয়েছিল। সেই জীবটির প্রাণ তো গিয়েছিল। এটি বিধির বিধান যে আমরা যে কর্ম করি, তার ফল অবশ্যই ভোগ করতে হয়। আপনার পুণ্য এতটাই প্রবল ছিল যে সেই পাপের ফল প্রকাশ পেতে ১০১টি জন্ম লেগে গেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মফল ভোগ করতেই হলো।”
কৃষ্ণ আরও বলেন, “যে জীব যত বেশি যন্ত্রণা সহ্য করে মারা যায়, তার সেই কষ্ট অবশ্যই সেই কর্মকারী আত্মাকে এই জীবনে অথবা অন্য কোনো জীবনে ভোগ করতে হয়। তাই দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজ সাবধানে করা উচিত। কর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে।”
এই পৌরাণিক কাহিনি আমাদের কর্মফলের গুরুত্ব এবং সূক্ষ্মতম কাজের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে।