অবিশ্বাস্য! দেশের মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ দেন আয়কর, কেন ৪৮ লক্ষ কোটি টাকা বাকি? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬.৬৮ শতাংশ নাগরিক আয়কর রিটার্ন ফাইল করেন। হাতেগোনা এই অংশ থেকেই বছরে ২২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ‘উপার্জন’ হয় কেন্দ্রীয় সরকারের। কিন্তু এই পরিসংখ্যানের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অর্থনীতির এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। চলতি অর্থবর্ষের শুরু পর্যন্ত হিসেব কষে দেখা যাচ্ছে, আয়কর, তার উপর সুদ এবং জরিমানা মিলিয়ে সরকারের কোষাগারে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৮ লক্ষ ১৮ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল অঙ্কের বকেয়া আদায়ই এখন অর্থ মন্ত্রকের মূল লক্ষ্য।
বকেয়া আদায়ের জন্য ইতিমধ্যেই আয়কর দপ্তরের কর্তাদের ওপর সময় বেঁধে দিয়ে চাপ তৈরি করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষেই তাঁদের ৮ লক্ষ ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বকেয়া আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই লক্ষ্যমাত্রা অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু কেন জমছে বকেয়ার পাহাড়?
দপ্তরের কর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, সাধারণ মানুষ ও বাণিজ্যিক সংস্থা টিডিএস (TDS) এবং অগ্রিম কর বা অ্যাডভান্স ট্যাক্স জমা দেন। এরপরও যদি আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় কোনো বকেয়া থাকে, তা মিটিয়ে দিতে হয়। তবে সব ফাইল স্ক্রুটিনি করা হয় না। নির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠির ভিত্তিতে বেছে নেওয়া আয়করদাতাদের পরীক্ষা করার পর যদি দেখা যায়, তাঁরা প্রাপ্য করের চেয়ে কম দিয়েছেন, তবে বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। যাঁরা সেই টাকা মেটাতে পারেন না, সেটাই আয়কর বকেয়া হিসেবে জমা হয়।
বিশেষত, নোট বাতিলের সময় বহু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রাতারাতি বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছিল। সেই টাকার উৎস খুঁজতে গিয়ে অনেক করদাতার কাছে মোটা অঙ্কের আয়কর চেয়ে বসেছিল দপ্তর। এক কর্তার মতে, আয়ের সঙ্গে সংগতি নেই এমন বহু অ্যাকাউন্টে নোট বাতিলের সময় লক্ষ লক্ষ টাকা জমা পড়েছিল। দপ্তর ধরে নেয়, ওই টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরই রোজগার। সেই অনুযায়ী তাঁদের বকেয়া আয়করের নোটিশ পাঠানো হয়। সেই বিপুল অঙ্কের একটি বড় অংশও বর্তমানে বকেয়া তালিকায় রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বকেয়া আদায়ে প্রশাসনিক জটিলতা:
এই পরিস্থিতিতে টার্গেট বেঁধে দেওয়ায় দপ্তরের অন্দরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কর্মী ও অফিসারদের একাংশের দাবি, বকেয়া টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা বেড়েছে। আগে তাঁরা সহজেই করদাতার সম্পত্তির দখল নিতে পারতেন, বা ব্যাঙ্ককে ফিক্সড ডিপোজিট তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারতেন। এখন সেই কাজের জন্যও অতি উচ্চ পদাধিকারীর অনুমতি প্রয়োজন হয়। ফলে বকেয়া আদায়ের প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।