সাড়ে ৩ কোটি বছর আগের বিরাট রহস্য ফাঁস! ভারতে বর্ষা আসার আসল কারণ কি লুকিয়ে আছে আন্টার্কটিকায়? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
সারা বছর ধরে বাঙালি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বর্ষার আগমনের। এই বর্ষার মরশুমের সূচনা কীভাবে হয়েছিল ভারতে? সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর গবেষণা রিপোর্টে উঠে এলো সাড়ে তিন কোটি বছর আগের এক অজানা যোগসূত্র, যা আমাদের প্রচলিত ধারণা পাল্টে দিতে পারে। বিজ্ঞানীদের দাবি, আন্টার্কটিকায় যখন প্রথম বরফ জমতে শুরু করে, ঠিক তখনই ভারতে বর্ষার সূচনা হয়!
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ লখনউয়ের বীরবল সাহানি ইনস্টিটিউট অব প্যালিওসায়েন্স এবং দেরাদুনের ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অব হিমালয়ান জিওলজির গবেষকদের এই রিপোর্ট নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। গবেষকরা নাগাল্যান্ডের এক প্রত্যন্ত পাহাড়ে খুঁজে পেয়েছেন প্রায় ৩ কোটি ৪০ লক্ষ বছর পুরোনো কিছু গাছের পাতার ফসিল, যা ‘লাইসং ফর্মেশনে’ অতি যত্নে সংরক্ষিত ছিল।
বরফ জমেছে আন্টার্কটিকায়, বৃষ্টি বেড়েছে ভারতে! কীভাবে সম্ভব হলো এই ঘটনা?
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, যখন আন্টার্কটিকায় ধীরে ধীরে বরফের চাদর তৈরি হতে শুরু করে, তখন ভারতের উত্তর-পূর্বের নাগাল্যান্ডের আবহাওয়া ছিল উষ্ণ এবং অতিমাত্রায় আর্দ্র। বিজ্ঞানীরা বিশেষ প্রযুক্তি ‘ক্লাইমেট লিফ অ্যানালিসিস মাল্টিভ্যারিয়েট প্রোগাম’ বা ‘ক্ল্যাম্প’-এর সাহায্যে ফসিলটি বিশ্লেষণ করে জানতে পারেন, সেই সময় নাগাল্যান্ডে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই ধরনের ক্রান্তীয় পরিবেশের কারণ খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন আসল রহস্য। তাদের গবেষণাপত্র অনুযায়ী, আন্টার্কটিকায় বরফের স্তূপ তৈরি হতে শুরু করার পর বিশ্বব্যাপী বায়ু প্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের চরিত্রগত পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টি বলয় ‘ইন্টারট্রপিক্যাল কনভারজেন্স জোন’ (আইটিসিজেড) দক্ষিণ মেরুর দিক থেকে ট্রপিক্যাল এলাকার দিকে সরে আসে। আর এই কারণেই ভারতে বেশি মাত্রায় বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং দেশে বর্ষার মরশুমের সূচনা হয়।
বড় উদ্বেগের কারণ: বর্ষার ভবিষ্যৎ কি অনিশ্চিত?
গবেষণার এই ফলাফল একদিকে যেমন নতুন তথ্যের সন্ধান দিয়েছে, তেমনই অন্যদিকে তৈরি হয়েছে গভীর উদ্বেগ। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস বলেন, “দেশে বর্ষা আসার বিষয়টি বিভিন্ন বিষয়কে প্রভাবিত করে। বর্ষার উপর নানা গবেষণা চলছে।”
কিন্তু মূল প্রশ্ন হলো, বর্তমানে আন্টার্কটিকার হিমবাহগুলি দ্রুত গলতে শুরু করায় ‘আইটিসিজেড’ যদি ফের তার অবস্থান পরিবর্তন করে, তাহলে ভারতে বর্ষার সময় ও চরিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে কি না? গবেষকরা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আসা বর্ষার চরিত্রে কোনো পরিবর্তন হলে তা কেবল পরিবেশ নয়, দেশের অর্থনীতির উপরও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই বিজ্ঞানীদের আর্জি, নিজেদের স্বার্থেই পরিবেশ রক্ষার উপর মনোযোগ দেওয়া হোক।