রেলের জমিতেই রাত কাটছে ব্যবসায়ীদের, মাঝরাতে উচ্ছেদের চরম হুঁশিয়ারি! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশন চত্বর ফের উত্তপ্ত। রেলের উচ্ছেদ নোটিশকে কেন্দ্র করে চরম অনিশ্চয়তার মুখে প্রায় ২৫ জন ব্যবসায়ী। পুনর্বাসন ছাড়া ভিটে ছাড়তে নারাজ এই দোকান মালিকরা টানা ন’দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই রেল কর্তৃপক্ষের ‘চরম’ হুঁশিয়ারি ঘিরে আজ, সোমবার এনজেপি এলাকায় বড় ধরনের গণ্ডগোলের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে, এতদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসা এই ব্যবসায়ীদের হঠাৎ কেন উচ্ছেদ করতে চাইছে রেল?

জানা যাচ্ছে, এডিআরএম অফিসের সামনে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করা এই দোকান মালিকদের সম্প্রতি উচ্ছেদ নোটিশ ধরানো হয়। পুনর্বাসনের দাবি তুলে সেই নোটিশের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন তাঁরা। আন্দোলনে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও শামিল হয়েছেন।

আরপিএফের আলটিমেটাম, বৃহত্তর প্রতিবাদের প্রস্তুতি

আন্দোলন চলাকালীনই শনিবার রাতে রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ) কার্যত চরম সময়সীমা জানিয়ে দেয়। ধর্না মঞ্চে আরপিএফ এসে ব্যবসায়ীদের জানায়, রবিবার অর্থাৎ আজকের মধ্যে দোকানপাট সরিয়ে না নিলে সোমবার জোর করে সব দোকান ভেঙে দেওয়া হবে। এই হুঁশিয়ারি পাওয়ার পর থেকেই ব্যবসায়ীরা বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। যেকোনো মূল্যে উচ্ছেদ প্রতিরোধ করার পণ করেছেন তাঁরা।

বিজেপি বিধায়কের ভূমিকা ঘিরেও প্রশ্ন

বৃহস্পতিবার স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় ব্যবসায়ীদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে রেলের উচ্ছেদের বিরোধিতা করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন। কিন্তু রবিবার তিনি আন্দোলন মঞ্চের কাছাকাছি এসে পরিচিত দু’জন ব্যবসায়ীকে ডেকে কিছু কথা বলে দ্রুত ফিরে যান। তিনি মঞ্চে ওঠেননি। বিধায়কের এই আচরণে ভরসা হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদেরই একজন, দেবোত্তম ঝা বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে আন্দোলন করছি না। বিধায়ক সকলের। মঞ্চে আসার অনুরোধ জানালেও তিনি দূরে দাঁড়িয়ে চলে গেলেন। আমরা হতাশ।” বিধায়ক অবশ্য এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে জানান, তিনি রেলমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন এবং উত্তরের অপেক্ষায় আছেন।

সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি ব্যবসায়ী সমিতির

এনজেপি থানা মোড়ের ব্যবসায়ীদের এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে শিলিগুড়ি বৃহত্তর খুচরা ব্যবসায়ী সমিতি। ২২ অক্টোবর সংগঠনের পক্ষ থেকে এডিআরএম-কে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। সংগঠনের সভাপতি পরিমল মিত্র জানান, স্মারকলিপি দেওয়ার সময় এডিআরএম আলোচনার আশ্বাস দিলেও এখন আরপিএফ উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “যদি গায়ের জোরে উচ্ছেদ করা হয়, আমরা সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করব। ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দিয়েই উচ্ছেদ করতে হবে।”

তবে, এই পরিস্থিতিতে এডিআরএম অফিসের এক আধিকারিক স্পষ্ট জানিয়েছেন, রেল কাউকে তার জমিতে বসায়নি। পুনর্বাসনের দায়িত্ব রেলের নয় এবং রেল তার জমি উদ্ধার করবে।

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, তারা উন্নয়নের পক্ষে। কিন্তু ২৫টি দোকান তুলে দিয়ে সেখানে কোচ রেস্তরাঁ তৈরি করাটা কি আদৌ উন্নয়ন? তাঁরা টাকা দিতেও প্রস্তুত আছেন, অথবা রেলের ফাঁকা জমিতে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। সবমিলিয়ে, পুনর্বাসনের দাবিতে অনড় ব্যবসায়ীরা এবং জমি উদ্ধারে দৃঢ় রেল— এনজেপি-তে পরিস্থিতি যে কোনও মুহূর্তে আরও গুরুতর হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *