কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে সতীশ শাহের; ‘এই’ বিষয়গুলিই কারণ, ‘এই’ লক্ষণগুলি দেখলে সাবধান থাকুন – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
টিভি ও বলিউডের অত্যন্ত পরিচিত মুখ, জনপ্রিয় অভিনেতা সতীশ শাহের প্রয়াণ ঘটেছে। মুম্বইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। একাধিক হিন্দি ছবি ও জনপ্রিয় টিভি সিরিজে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন জয় করেছিল।
জানা গিয়েছে, ৭৪ বছর বয়সি এই অভিনেতা দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। একাধিক ব্লকবাস্টার ছবি যেমন ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’, ‘ম্যায় হুঁ না’ এবং জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই’-এ তাঁর চরিত্রগুলি বিশেষভাবে পরিচিত। অভিনেতার মৃত্যুর পর এই মারাত্মক রোগটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, যা অনেক সময় চুপিসারে শরীরে বাসা বাঁধে।
কিডনি বিকল হওয়া বলতে কী বোঝায়? কেন হয় এই রোগ? এর লক্ষণগুলি কী কী?
আসলে কী ঘটে যখন কিডনি বিকল হয়?
কিডনি ফেইলিওর একটি গুরুতর অবস্থা, যেখানে কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ এবং অতিরিক্ত জল বের করে দেওয়াই কিডনির প্রধান কাজ। এছাড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, শরীরের মিনারেলসের ভারসাম্য রক্ষা এবং লোহিত রক্তকণিকা (RBC) তৈরিতেও কিডনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে থাকে, যা পরিস্থিতিকে মারাত্মক করে তোলে এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।
কিডনি বিকল হওয়ার ২ প্রধান কারণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনি বিকল হওয়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে, তবে প্রধানত দুটি কারণকে দায়ী করা হয়:
১. ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রোগীদের কিডনি ফেইলিওরের ঝুঁকি বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে কিডনির রক্তনালীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ছাঁকনির কাজ ঠিকমতো করতে পারে না এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করার ক্ষমতা কমে আসে।
২. উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেশার): উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনির রক্তনালীগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। সময়ের সাথে সাথে এই নালীগুলি দুর্বল হয়ে যায় এবং কিডনি রক্তকে সঠিকভাবে পরিশোধন করতে পারে না। এর ফলে কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, যা ফেইলিওরের দিকে নিয়ে যায়। এছাড়াও, কিডনিতে সংক্রমণ এবং পাথরের সমস্যাও এই রোগের কারণ হতে পারে।
এই রোগের দুটি প্রকারভেদ কী কী?
- অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর: এটি হঠাৎ করে কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে ঘটে। ওষুধ, সংক্রমণ বা আঘাতের কারণে কিডনি দ্রুত দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সঠিক চিকিৎসায় এটি অনেক সময় নিরাময় করা সম্ভব।
- ক্রনিক কিডনি ফেইলিওর: এই সমস্যাটি ধীরে ধীরে কয়েক মাস বা বছর ধরে বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় কিডনি ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে এবং পুরোপুরি বিকল হতে পারে।
কিডনি ফেইলিওরের জরুরি লক্ষণ
যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখেন, তাহলে দ্রুত সতর্ক হোন:
- হাত, পা বা মুখে অস্বাভাবিক ফোলা ভাব
- অত্যধিক ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
- বমি বমি ভাব, বমি হওয়া বা ক্ষুধা হ্রাস
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা বুকে চাপ অনুভব
- কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিতে অসুবিধা
- শরীরে চুলকানি বা ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
কিডনি ভালো রাখতে কী করবেন?
কিডনি সুস্থ রাখতে রক্তে শর্করা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। যদি আপনার ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে নিয়মিত কিডনির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি।