চীনে নাকি খোলা বাজারে বিক্রি হয় বর-কনে? হাহাকার ফেলে দেওয়া সেই ‘বিবাহ বাজার’-এর আসল রহস্য জানুন – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

চমকে উঠছেন? ভাবছেন, এ কেমন বাজার যেখানে কাপড় বা সবজির বদলে স্বামী-স্ত্রীর ‘সওদা’ হয়? না, এই বাজার কোনো কল্পকাহিনী নয়। চীনের সাংহাইয়ের পিপলস পার্কের মাঝেই প্রতি সপ্তাহান্তে বসে এক অদ্ভুত ও করুণ ‘ম্যারেজ মার্কেট’ বা বিবাহ বাজার, যেখানে শত শত বাবা-মা ভিড় করেন তাদের সন্তানদের জন্য জীবনসঙ্গী খুঁজতে। এই বাজারই আজ বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে চীনের এক গভীর সামাজিক সংকট

আসলে কী ঘটে এখানে?

পার্কের সবুজ চত্বরে শত শত অভিভাবক ভিড় করেন। তাঁদের হাতে থাকে ছাতা বা ভাঁজ করা বোর্ডের ওপর লাগানো A4 সাইজের পোস্টার। এই পোস্টারগুলিতে পাত্র বা পাত্রীর ছবি, বয়স, উচ্চতা, আয়, চাকরি, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং শখ পর্যন্ত সব বিস্তারিত তথ্য লেখা থাকে। সন্তানরা নিজেরা না এলেও, বাবা-মায়েরা এখানে এসে খোলামেলা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সন্তানের জন্য ‘পারফেক্ট’ জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের কাছে এই বাজারটি আশার শেষ আলো

কিন্তু কেন এই অদ্ভুত প্রথা?

এই প্রথা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। এর পেছনে রয়েছে চীনের বিতর্কিত এক-সন্তান নীতি ও গভীর সামাজিক বৈষম্য।

  • লিঙ্গ বৈষম্য: এক-সন্তান নীতির ফলে বহু পরিবার পুত্রসন্তানকে বেশি প্রাধান্য দিত। এর ফলস্বরূপ, সমাজে লিঙ্গ অসাম্য সৃষ্টি হয়েছে।
  • কোটি কোটি অবিবাহিত: পরিসংখ্যান বলছে, চীনে বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি পুরুষ রয়েছেন, যাদের জন্য উপযুক্ত জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
  • ‘শেন নু’ কলঙ্ক: অন্যদিকে, যে মহিলারা কেরিয়ার বা স্বাধীন জীবনকে অগ্রাধিকার দেন এবং দেরিতে বিয়ে করেন, সমাজ তাঁদের ‘শেন নু’ (Sheng Nu) বা ‘অবশিষ্ট মেয়ে’ তকমা দিয়ে কটাক্ষ করে।

জনসংখ্যার চরম সংকটে চীন

এই বিবাহ বাজার চীনের ঐতিহাসিক জনসংখ্যার সংকটকে স্পষ্ট করে। জন্মহার এখন সর্বনিম্ন স্তরে, আর গত বছরের তুলনায় বিয়ের সংখ্যা কমেছে ১৭ শতাংশ। বহু তরুণ-তরুণী এখন আর বিয়ে-সংসারকে জীবনের ‘বাধ্যতা’ হিসেবে দেখছেন না। আকাশছোঁয়া জীবনযাত্রার খরচ, বাড়তে থাকা বাড়ির দাম ও কেরিয়ারের চাপ—সব মিলিয়ে তারা স্বাধীন জীবনকেই বেশি পছন্দ করছেন।

তাই সাংহাইয়ের এই ‘ম্যারেজ মার্কেট’ এখন এক অদ্ভুত দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে। এটি কেবল পাত্র-পাত্রী খোঁজার বাজার নয়, এটি যেন হারিয়ে যাওয়া সামাজিক ভারসাম্য এবং বাবা-মায়েদের এক চাপা উদ্বেগের প্রতিচ্ছবি। এই প্রবণতা এখন সাংহাই ছাড়াও বেইজিং, গুয়াংজু ও চেংদুর মতো বড় শহরগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *