পাকিস্তানেই আছে এমন একটি গোপন উপত্যকা, যেখানে মানুষ বাঁচে ১২০ বছর! এর নেপথ্যে কি কোনো ‘জাদুকরী তেল’? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, যা প্রায়শই অর্থনৈতিক সংকট বা অন্য কারণে আলোচনায় থাকে, সেই দেশেরই একটি বিশেষ এলাকা হুঞ্জা উপত্যকা (Hunza Valley) বিশ্বজুড়ে পরিচিত এক ভিন্ন কারণে— এখানকার মানুষের অবিশ্বাস্য দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনকালের জন্য।
পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের (PoK) এই উপত্যকার বাসিন্দারা ১২০ বছর বয়স পর্যন্তও অনায়াসে সুস্থ জীবন যাপন করেন। অবাক করার বিষয় হলো, এদের মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগ প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এমন সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর রহস্য আসলে কী? কোনো দামি ওষুধ বা চিকিৎসার মাধ্যমে নয়, এর আসল রহস্য লুকিয়ে আছে একটি প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে— তিক্ত খুবানির তেল (Bitter Apricot Oil)।
দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের প্রতীক হুঞ্জা উপত্যকা
কম জনসংখ্যার এই হুঞ্জা উপত্যকার বাসিন্দারা কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাজা ফল ও সবজি খান এবং প্রকৃতির একেবারে কাছাকাছি থাকেন। যদিও তাদের জীবনযাত্রাই সুস্বাস্থ্যের অন্যতম চাবিকাঠি, তবে স্থানীয়দের বিশ্বাস, তাদের দীর্ঘ ও রোগমুক্ত জীবনের আসল রাজ হলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ব্যবহৃত এই খুবানির তেল।
কী এই খুবানির তেল, যা নিয়ে এত আলোচনা?
তিক্ত খুবানির তেল তৈরি হয় খুবানির বীজ থেকে। এই বীজে অ্যামিগডালিন (Amygdalin) নামে একটি বিশেষ উপাদান পাওয়া যায়, যা ভিটামিন B17 বা লেট্রাইল নামেও পরিচিত। কিছু গবেষণায় এই উপাদানের ক্যান্সার-বিরোধী গুণ থাকার দাবি করা হলেও, এর মেডিক্যাল সুবিধা নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়। তবে হুঞ্জা উপত্যকার মানুষের কাছে এটি একটি প্রাকৃতিক ওষুধের মতোই, যা গাঁটের ব্যথা, ত্বকের সমস্যা ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে বলে তাদের দাবি।
এই ‘জাদুকরী’ তেলের আশ্চর্য উপকারিতাগুলি কী?
১. গাঁটের ব্যথা ও পেশীর কষ্টের প্রাকৃতিক নিরাময়
হুঞ্জা উপত্যকার মানুষ শীতকালে যখন গাঁটের ব্যথা বাড়ে, তখন এই তেল ব্যবহার করেন। তাদের বিশ্বাস, মালিশের ফলে এটি শরীরের গভীরে প্রবেশ করে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, এবং ফোলা, শক্ত হয়ে যাওয়া বা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যার সমাধানে অনেকে একে প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেন।
২. ত্বক ও চুলের জন্য সেরা টনিক
এই তেলে থাকা ভিটামিন E, ভিটামিন C এবং ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে আর্দ্রতা, উজ্জ্বলতা ও দৃঢ়তা দেয়। নিয়মিত ব্যবহারে বলিরেখা, ফাইন লাইনস এবং ত্বকের বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যেতে পারে। চুলের জন্যেও এই তেল অত্যন্ত কার্যকর— এটি চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল পড়া কমায় ও মাথার ত্বকে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে চুলকে ঘন ও চকচকে করতে সহায়ক।
৩. গুরুতর রোগ থেকে সুরক্ষার দাবি
স্থানীয়দের মধ্যে জনপ্রিয় ধারণা হলো, খুবানির বীজে থাকা অ্যামিগডালিন উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়ক। বিজ্ঞানীরা এখনও এই দাবিকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত না করলেও, হুঞ্জা উপত্যকায় ক্যান্সারের ঘটনা অত্যন্ত কম হওয়ায় অনেকেই বিশ্বাস করেন যে এই তেল তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity) শক্তিশালী করে এবং শরীরকে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যালস থেকে রক্ষা করে।
ব্যবহারবিধি ও সতর্কতা
তেলের ব্যবহার:
- মালিশে: হালকা হাতে ত্বকে বা গাঁটের ব্যথার জায়গায় মালিশ করা হয়।
- চুলের জন্য: সপ্তাহে ২-৩ বার মাথার ত্বকে মালিশ করে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলা হয়।
- খাবারে: খুব কম পরিমাণে (প্রায় এক চামচ) তেল সালাদ বা স্যুপের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে, যা হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:
যদিও খুবানির তেল প্রাকৃতিক, কিন্তু অ্যামিগডালিন উপাদান বেশি পরিমাণে শরীরে গেলে সাইনাইডের মতো বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই খাওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে মালিশ বা ত্বক-চুলের যত্নে এর বাহ্যিক ব্যবহার সাধারণত নিরাপদ বলেই মনে করা হয়।
তাহলে কি এই সহজলভ্য প্রাকৃতিক তেলই হুঞ্জা উপত্যকার মানুষের ১২০ বছর বেঁচে থাকার আসল গোপন সূত্র, নাকি তাদের সম্পূর্ণ জীবনধারা এর নেপথ্যে কাজ করছে? বিষয়টি সত্যিই কৌতূহল জাগায়।