দাদুর ৫০ বছরের পুরোনো কুঁড়েঘর সরালেন নাতি, খরচ মাত্র ৬ হাজার! কারণ জানলে অবাক হবেন আপনিও – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
দাদা অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের স্মৃতি ধরে রাখার এমন প্রচেষ্টা আজকের দিনে বিরল! যেখানে মানুষ পুরোনো জিনিস ভেঙে নতুন করার প্রবণতায় অভ্যস্ত, সেখানে এক নাতির এই কাজ মন কেড়েছে হাজারো মানুষের। কিন্তু কেন হঠাৎ ঝুঁপড়িটিকে সরাতেই হল, কী এমন ঘটেছিল রাজস্থানের এই গ্রামে?
৫০ বছরের স্মৃতি বাঁচাতে পদক্ষেপ
ঘটনাটি ঘটেছে রাজস্থানের বাডমেরের সিণধরি মহকুমার করডালি নাডি গ্রামে। গ্রামের একটি ছোট্ট ডাঁনিতে ছিল প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো একটি ঝুঁপড়ি। এটি ছিল এলাকার বাসিন্দা পুরখারামের দাদুর হাতে তৈরি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁপড়িটির ভিত দুর্বল হতে শুরু করে। পুরখারামের আশঙ্কা হয়, এখনই কিছু না করলে স্মৃতিবিজড়িত এই কুঁড়েঘরটি হয়তো ভেঙে পড়বে।
জানা গেছে, ঝুঁপড়িটির ভিত উইপোকার আক্রমণে দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল। দাদুর শেষ স্মৃতিচিহ্নকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে, পুরখারাম দ্রুত ব্যবস্থা নেন। তিনি একটি হাইড্রা ক্রেন ব্যবহার করে পুরো ঝুঁপড়িটিকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে দেন।
খরচ মাত্র ৬ হাজার টাকা!
পুরখারাম জানান, ঝুঁপড়িটি স্থানান্তর করার জন্য তাঁর খরচ হয়েছে মাত্র ৬ হাজার টাকা। তাঁর কাছে টাকার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল দাদুর স্মৃতিকে রক্ষা করা। তিনি মনে করেন, ছাদটি মেরামত করে দিলে এটি আরও ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত নিরাপদে থাকবে। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করলে একটি ঝুঁপড়ি ১০০ বছর পর্যন্তও টিকে থাকতে পারে।
লুপ্তপ্রায় শিল্পের সংরক্ষণ
পুরখারামের মতে, এই ধরনের একটি নতুন ঝুঁপড়ি তৈরি করতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং ৫০-৭০ জন মানুষের দু’দিনের কাজ লাগে। তবে দুঃখের বিষয় হল, এই কুঁড়েঘর তৈরির ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা এখন বিলুপ্তির পথে। খুব কম লোকই এখন এর আসল নির্মাণ পদ্ধতি জানেন।
প্রাকৃতিক নির্মাণ ও আরামদায়ক আবহাওয়া
এই ঝুঁপড়িগুলো তৈরি হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে। মাটি খুঁড়ে, তার সঙ্গে পশুর গোবর মিশিয়ে ভিত বা দেওয়াল তৈরি করা হয়। এরপর গাছের খুঁটি ও কাঠ ব্যবহার করে ছাদের জন্য কাঠামো তৈরি করা হয়। ছাদ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয় আকন্দ কাঠ, বাজরার ডাঁটা, খীম্প বা সেওন জাতীয় ঘাস।
পুরখারাম জানান, রাজস্থানের মতো অঞ্চলে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা যেখানে ৪৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়, সেখানেও এই ঝুঁপড়িগুলোর ভেতরে প্রাকৃতিকভাবেই শীতল পরিবেশ বজায় থাকে। ফলে সেখানে এসি বা ফ্যানের কোনো প্রয়োজন হয় না। দাদুর স্মৃতি ধরে রাখার পাশাপাশি, পরিবেশবান্ধব এই নির্মাণশৈলীটির উপকারও পাচ্ছেন তাঁরা।