রাত ২টা পেরোতেই ঘড়িতে ফের ২টা? কানাডা-আমেরিকায় সময়ের এই রহস্যময় খেলা চলছে কেন – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
পশ্চিমা দেশগুলিতে সময় নিয়ে এক অবাক কাণ্ড চলছে! কানাডা এবং আমেরিকার লক্ষ লক্ষ নাগরিক ২ নভেম্বর রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেবেন। রাত ২টোর পর ঘড়িতে ৩টে বাজার কথা, কিন্তু উল্টে ফের বাজবে ২টো। এই অদ্ভুত পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’ (Daylight Saving Time বা DST) নামের একটি প্রথা। প্রতি বছর দু’বার এই সময় পরিবর্তন করা হয়, যার ফলে একবার রাত ছোট হয় তো আরেকবার হয় দীর্ঘ।
আসলে কী এই ডেলাইট সেভিং টাইম?
খুব সহজভাবে বললে, DST হল বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘড়িকে এগিয়ে বা পিছিয়ে দিয়ে দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কৌশল।
- মার্চ মাসে (‘Spring Forward’): গ্রীষ্মের শুরুতে ঘড়ি এক ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়া হয়।
- নভেম্বর মাসে (‘Fall Back’): শীতের শুরুতে ঘড়ি এক ঘণ্টা পিছিয়ে স্বাভাবিক সময়ে ফিরিয়ে আনা হয়।
গ্রীষ্মকালে সূর্য খুব ভোরে ওঠে এবং সন্ধ্যায় দেরিতে অস্ত যায়। অর্থাৎ দিনের আলো দীর্ঘ হয়। অনেক মানুষ সকালে যখন সূর্যের আলো থাকে, তখনও ঘুমিয়ে থাকেন এবং সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পথে তাড়াতাড়ি অন্ধকার নেমে আসে। এই অতিরিক্ত সকালের আলোকে কাজে লাগাতে এবং সন্ধ্যার দিকে আরও বেশি আলো পেতে ঘড়িকে এক ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, দিনের আলো থাকাকালীন কাজের সময় বেড়ে যায়। নভেম্বরে যখন দিন ছোট হতে শুরু করে, তখন ঘড়িকে আবার স্বাভাবিক সময়ে ফিরিয়ে আনা হয়।
যেমন, কানাডার টরন্টোতে ১ নভেম্বর সূর্যোদয় হয় সকাল ৭টা ৫৪ মিনিটে। কিন্তু ২ নভেম্বর ‘Fall Back’ বা সময় পরিবর্তনের পর সূর্যোদয় হবে সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে। ফলে বেশিরভাগ মানুষ ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বা তার একটু পর থেকেই দিনের আলো পাবেন এবং তা কাজে লাগাতে পারবেন।
কেন এই নিয়মের প্রয়োজন পড়ল? ভারতে কেন হয় না?
পৃথিবী তার অক্ষের উপর সামান্য ঝুঁকে ঘোরার কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের আলো পৃথিবীর বিভিন্ন গোলার্ধে বিভিন্ন কোণে পড়ে। যখন সূর্য উত্তর গোলার্ধের দিকে থাকে (মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর), তখন দিন লম্বা হয়। DST সেই সময় “সূর্যের সাথে দিনকে” মেলানোর জন্যই প্রয়োগ করা হয়।
কিন্তু ভারতের মতো নিরক্ষরেখার কাছাকাছি দেশগুলিতে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যে খুব বেশি পার্থক্য হয় না। এখানে সূর্য সারা বছর প্রায় একই সময়ে উদয় ও অস্ত যায়, তাই আলাদা করে ঘড়ি বদলানোর প্রয়োজন পড়ে না।
DST-এর ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ
ডেলাইট সেভিং টাইমের ধারণাটি প্রথম আসে ১৮ শতকে আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা জনকদের অন্যতম বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের মাথা থেকে। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শক্তি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় এর আসল ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় ৭০টি দেশে DST চালু আছে, যদিও এর সময়কাল ভিন্ন।
তবে সময় পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যের ওপর কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বলে এটি বন্ধ করার দাবিও উঠেছে। রাশিয়া ২০১৪ সালে এটিকে স্থায়ীভাবে বাতিল করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ২০২৬ সালের মধ্যে এটি বাতিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কানাডা ও আমেরিকাতেও এই প্রথা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার আলোচনা চলছে এবং বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পাশ করেছে।
সময় পরিবর্তনের প্রভাব: ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার সময়ের পার্থক্য বাড়বে
২ নভেম্বর সময় পরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে কানাডা ও আমেরিকার সময় পার্থক্য আরও এক ঘণ্টা বাড়বে:
| শহর | নতুন টাইম জোন | ভারতের সঙ্গে পার্থক্য |
| টরন্টো (কানাডা) | ইএসটি (UTC-5) | ১০ ঘণ্টা ৩০ মিনিট (পিছনে) |
| ভ্যানকুভার (কানাডা) | পিএসটি (UTC-8) | ১৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট (পিছনে) |
| নিউ ইয়র্ক (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) | ইএসটি (UTC-5) | ১০ ঘণ্টা ৩০ মিনিট (পিছনে) |
| লস অ্যাঞ্জেলেস (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) | পিএসটি (UTC-8) | ১৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট (পিছনে) |