অদ্ভূত রোগ! ডায়াবেটিস-প্রেসার ছাড়াই কিডনি বিকল হচ্ছে কাদের? জানলে আঁতকে উঠবেন – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
হায়দ্রাবাদে তরুণদের মধ্যে এক রহস্যজনক কিডনি রোগ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগের নাম ‘ক্রনিক কিডনি ডিজিজ অফ আননোন ইটিওলজি’ বা সিকেডিইউ (CKDu)। এই অচেনা রোগে আক্রান্তরা মূলত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী, যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের কোনও পূর্ব ইতিহাস নেই। অথচ তাদের কিডনির গুরুতর ক্ষতি হচ্ছে।
ওসমানিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও অ্যাপোলো হাসপাতালের যৌথ গবেষণায় এই অস্বাভাবিক কিডনি রোগের ধারাটি চিহ্নিত হয়েছে, যা প্রধানত শহুরে বাসিন্দাদের প্রভাবিত করছে। আগে যেখানে গ্রামীণ কৃষি অঞ্চলে কর্মরতদের মধ্যে সিকেডিইউ-এর খবর পাওয়া যেত, এখন এই রোগের ভিন্ন রূপ দেখা যাচ্ছে, যার সঙ্গে অন্য ঝুঁকি উপাদান জড়িত।
আসলে কী এই CKDu?
চিকিৎসকরা বলছেন, যখন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো নিশ্চিত কারণগুলি বাদ দেওয়ার পরেও কিডনি রোগের কোনও নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, তখনই তাকে সিকেডিইউ বলা হয়। প্রাথমিকভাবে কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে এই রোগ চিহ্নিত হয়েছিল, যারা তাপ, বিষাক্ত পদার্থ এবং ডিহাইড্রেশনের শিকার হতেন। তবে এখন শহুরে, অ-কৃষি শ্রমিকদের মধ্যেও এই রোগের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্প্রতি আক্রান্ত হওয়া প্রায় ৭৫ জন রোগীর মধ্যে সিকেডিইউ-এর একটি স্বতন্ত্র ধরন দেখা গেছে। এরা বেশিরভাগই তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক যারা ছোট ব্যবসা ও পরিষেবা শিল্পে কাজ করেন এবং তাদের কোনও কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা নেই। এই আবিষ্কারটি পূর্ববর্তী চিকিৎসা ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, যেখানে মনে করা হত সিকেডিইউ কেবল কৃষিকাজ এবং অতিরিক্ত তাপের সংস্পর্শেই বিকশিত হয়।
ডাক্তাররা সতর্ক করেছেন যে, স্থায়ী কিডনি ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত সিকেডিইউ প্রায়শই লক্ষণ ছাড়াই অগ্রসর হয়। যখন রোগীদের ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ রোগ যখন অপরিবর্তনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়, তখনই সাধারণত চিকিৎসা শুরু হয়। আক্রান্ত বহু রোগীর কিডনি বায়োপসিতে দেখা গেছে, কিডনির ফিল্টারিং ইউনিটগুলিতে ব্যাপক ক্ষত ও প্রদাহ তৈরি হয়েছে, যা গুরুতর এবং শেষ পর্যায়ের ক্ষতির প্রমাণ।
কেন বাড়ছে শহুরে CKDu?
বিজ্ঞানীরা সিকেডিইউ-এর সম্ভাব্য কারণগুলি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে পরিবেশের ভারী ধাতু, কীটনাশক এবং জল দূষণকারী পদার্থ থাকতে পারে। গবেষণা বলছে, এই ক্ষেত্রে তাপ, মানসিক চাপ এবং ডিহাইড্রেশনের বড় কোনও ভূমিকা নেই, কারণ আক্রান্তদের মাত্র ২০ শতাংশ কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত।
তবে, শহুরে সিকেডিইউ মামলার প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভেষজ এবং ঐতিহ্যবাহী ওষুধ সেবন। গবেষণায় দেখা গেছে, হায়দ্রাবাদের ৪০ শতাংশ রোগী অনিয়ন্ত্রিত চিকিৎসা পণ্য ব্যবহার করেছেন, যা নেফ্রোটক্সিক পদার্থ বা দূষক পদার্থে ভরপুর। এই উপাদানগুলি কিডনির দ্রুত অবনতি ঘটায়।
সিকেডিইউ-এর লক্ষণগুলি কী কী?
সিকেডিইউ-এর লক্ষণগুলি অন্যান্য ক্রনিক কিডনি রোগের মতোই হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজনীয়তা।
- ক্লান্তি, দুর্বলতা, শক্তির অভাব।
- ক্ষুধা হ্রাস।
- হাত, পা এবং গোড়ালি ফুলে যাওয়া।
- শ্বাসকষ্ট।
- ফেনা বা বুদবুদযুক্ত প্রস্রাব।
- ফোলা চোখ।
- শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত ত্বক।
- মনোযোগ দিতে অসুবিধা।
- ঘুমের সমস্যা।
- অবশ ভাব।
- বমি বমি ভাব বা বমি।
- পেশীর খিঁচুনি।
- উচ্চ রক্তচাপ।
- ত্বকের রং কালচে হয়ে যাওয়া।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রক্তে বর্জ্য পদার্থ জমা হতে এবং উপসর্গ দেখা দিতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। উপসর্গগুলি সাধারণত রোগের উন্নত পর্যায়ে দেখা দেয়, যখন কিডনির যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে যায়। ফোলাভাব, ক্লান্তি এবং প্রস্রাবের অভ্যাসের পরিবর্তন দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।