পুতিন-ট্রাম্পের লড়াইয়ে কোপ! মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সাম্রাজ্য বেচতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়ার এই তেল কো ম্পা নি? আসল কারণ কী – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

ইউক্রেন সংঘাতের আবহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখে রুশ তেল কো ম্পা নিগুলোর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য এখন টালমাটাল। রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদক কো ম্পা নি লুকোইল (Lukoil) সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর ঘোষণায় জানিয়েছে, তারা তাদের আন্তর্জাতিক সম্পদ বিক্রি করে দেবে। গত সপ্তাহে আমেরিকার নতুন নিষেধাজ্ঞার পরই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম কোনো বৃহৎ রুশ কো ম্পা নিকে আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার জেরে এমন সুপরিকল্পিতভাবে তাদের বিদেশি সম্পদ বিক্রি করতে দেখা গেল। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, লুকোইল একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা OFAC উইন্ড-ডাউন লাইসেন্সের অধীনে এই সম্পদগুলি বিক্রি করছে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, যদি প্রয়োজন হয়, তবে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে তারা লাইসেন্সটি বাড়ানোর জন্য আবেদন করার পরিকল্পনা করছে।

নিষেধাজ্ঞার কারণ কী? সম্প্রতি ২২ অক্টোবর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন সংক্রান্ত বিষয়ে রাশিয়ার বৃহত্তম দুটি তেল কো ম্পা নি, লুকোইল এবং রোসনেফ্ট (Rosneft)-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এই দুটি কো ম্পা নি যৌথভাবে রাশিয়ার মোট অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের প্রায় ৫০ শতাংশ উৎপাদন করে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পরই লুকোইল এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো।

এছাড়াও, গত ১৫ অক্টোবর ব্রিটেন লুকোইল এবং রোসনেফ্টের সাথে যুক্ত ৪৪টি “ছায়া ট্যাঙ্কারের” (Shadow Tankers) উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই ট্যাঙ্কারগুলোর মালিকানা চিহ্নিত করা যায়নি। ব্রিটেন এবং আমেরিকার দাবি, এই নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য হলো রাশিয়াকে অপরিশোধিত তেল বিক্রি থেকে পাওয়া বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা, যা ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে।

বিক্রির তালিকায় কোন কোন সম্পত্তি? মস্কো-ভিত্তিক লুকোইল বর্তমানে বিশ্বের মোট অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের প্রায় ২ শতাংশ সরবরাহ করে। যদিও কো ম্পা নিটি এখনও ঘোষণা করেনি যে তারা ঠিক কোন কোন সম্পত্তি বিক্রি করবে, তবে বৈশ্বিক বাজার মনে করছে, বিক্রির তালিকায় বিশ্বের বৃহত্তম কয়েকটি তেল কূপ (Oil Well) এবং তেল শোধনাগার (Refineries) থাকতে পারে।

লুকোইলের সবচেয়ে বড় বিদেশি সম্পদ হল ইরাকের ওয়েস্ট কুরনা-২ তেল কূপ, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেলক্ষেত্র এবং এতে রাশিয়ার ৭৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। এছাড়াও, ইউরোপে তাদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি রয়েছে—

  • লুকোইল নেফটোচিম বুর্গাস রিফাইনারি: বুলগেরিয়ার এই শোধনাগারটি বলকান অঞ্চলের বৃহত্তম এবং এর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১৯০,০০০ ব্যারেল।
  • পেট্রোটেল রিফাইনারি: রোমানিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শোধনাগার।

এছাড়াও হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া এবং মধ্য এশিয়াতে (যেমন কাজাখস্তান) লুকোইলের বেশ কয়েকটি তেল অপারেশন চলছে। ইউরোপে তাদের তেল টার্মিনাল এবং পেট্রোল পাম্পের বড় খুচরা ব্যবসাও রয়েছে।

রাশিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, লুকোইল এবং রোসনেফ্টের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার গভীর প্রভাব পড়বে। এখন থেকে বিশ্বের কোনো কো ম্পা নিই এই দুই তেল সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখতে পারবে না। যারা এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে, তাদেরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে।

এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিতে মারাত্মক আঘাত হানবে, কারণ মস্কোর বার্ষিক বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে তেল ও গ্যাস রাজস্ব থেকে। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য এই অর্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকা মনে করছে, এই কঠোর পদক্ষেপের ফলে মস্কোর রাজস্বে ঘাটতি দেখা দেবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার ক্ষমতা কমে আসবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *