স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া কমাতে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

বিয়ে মানেই সিনেমার মতো ‘হ্যাপি এন্ডিং’ নয়। বাস্তব দাম্পত্য জীবনে একে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে মাঝেমধ্যে ঝগড়া, অভিমান আর মতবিরোধ হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। তবে এসব ঝগড়াকে সঠিকভাবে সামাল দিতে না পারলে সম্পর্ক তার গভীরতা হারাতে পারে।

তাই ঝগড়া-অভিমান উপেক্ষা না করে তা সমাধান করুন। কারণ সমস্যা পাশ কাটিয়ে যেতে থাকলে একসময় দূরত্ব অনেক বেড়ে যেতে পারে। তাই জেনে নিন দাম্পত্য জীবনের প্রধান প্রধান দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো কী এবং কীভাবে তা সমাধান করবেন –

১. খোলামেলা যোগাযোগ:

দম্পতিদের মধ্যে বেশিরভাগ মনোমালিন্য হয় ভুল বুঝাবুঝির জন্য। বিশেষ করে বিয়ের প্রথম দিকে। কারণ তখন দু’জন মানুষ কেবল একে অন্যের সঙ্গে বাস করতে শিখছেন।

তাই প্রথমেই দরকার খোলামেলা যোগাযোগ। প্রতিদিন কিছুটা সময় আলাদা করে শুধু কথা বলার জন্য রাখলে দু’জনই অপরজনের অনুভূতি বুঝতে পারবেন। জার্নাল অব ফ্যামিলি সাইকোলজি (২০২১)-এ প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দম্পতি নিয়মিত নিজেদের অনুভূতি শেয়ার করেন, তাদের সম্পর্কে সন্তুষ্টির মাত্রা অন্যদের চেয়ে বেশি।

২. রাগের সময় বিরতি নিন

রেগে গেলে অনেকেই সামনের জনের অনুভূতির তোয়াক্কা না করে মুখে যা আসে তাই বলে ফেলেন। কিন্তু পরে অনুশোচনা করলেও কটুকথার প্রভাব আর মুছে ফেলা যায়না। এমন কথা জমে জমে সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলতে পারে।

তাই ঝগড়ার সময় মাথায় রাগ উঠে গেলে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর না দিয়ে একটু বিরতি নিন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষণা বলছে, পাঁচ সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত বিরতি নিয়ে পরে আলোচনা করলে ঝগড়া বড় আকার ধারণ করে না।

৩. আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা করুন একসঙ্গে

অর্থনৈতিক বিষয়, ঘরের কাজ বা দায়িত্বের বণ্টন নিয়েও অনেক দম্পতির মধ্যে কলহ হয়। ২০১৯ সালে জার্নাল অব ম্যারেজ অ্যান্ড ফ্যামিলি-তে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, দায়িত্ব সমানভাবে ভাগাভাগি করলে দাম্পত্য সম্পর্কে সম্মান ও সহযোগিতা বাড়ে। তাই আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা হোক কিংবা ঘরের কাজ, দু’জনের মধ্যে সমঝোতা নেওয়াই ভালো।

৪. ঘনিষ্ঠতার সঙ্গে আপোষ করবেন না

বিশ্বাস ও ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কের ভিত্তি। একে অপরের প্রতি অকারণ সন্দেহ ঝগড়াকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে খোলাখুলি আলোচনা ও মাইন্ডফুলনেস চর্চা করা সহায়ক বলে গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে।

২০২৩ সালে জার্নাল অব কনটেক্সচুয়াল বিহেভিয়ারাল সায়েন্স-এ প্রকাশিত এই গবেষণাটিতে বলা হয়েছে – আলিঙ্গন, প্রশংসা বা একসঙ্গে সময় কাটানোর মতো ছোট ছোট ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখে।

৫. মনের মধ্যে খটকা পুষে রাখবেন না

ঝগড়া শেষে কোনো বিষয় ঝুলিয়ে না রেখে মিটিয়ে ফেলতে হবে। মনোবিজ্ঞানী জন গটম্যানের গবেষণায় দেখা যায়, যেসব দম্পতি দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে চান, অর্থাৎ দুঃখ প্রকাশ বা মনের কষ্ট স্বীকার করে নেন — তাদের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে যদি বারবার ঝগড়া বড় আকার নেয়, তবে পেশাদার কাউন্সেলিং নেওয়া উচিত।

ঝগড়া দাম্পত্য জীবনের স্বাভাবিক অংশ। তবে তা যেন ভালোবাসাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, বরং সম্পর্ককে নতুন করে গড়ে তোলে — সেজন্য প্রয়োজন ধৈর্য, বোঝাপড়া আর সচেতনতা। একে অপরকে সময় দিন, খোলামেলা কথা বলুন, ভুল হলে ক্ষমা চাইতে কুণ্ঠিত হবেন না। এভাবেই ঝগড়া নয়, ভালোবাসাই দাম্পত্য জীবনের মূল সুর হয়ে উঠবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *