মহাকাশের বিরাট চমক: ‘স্টার ওয়ার্স’ সিনেমার মতো দুই সূর্য! বিজ্ঞানীদের জালে ধরা পড়ল পৃথিবীর আকারের ৩ নতুন গ্রহ – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

নয়া দিল্লি: NASA-র ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট (TESS) আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় ১৯০ আলোকবর্ষ দূরে TOI-2267 নামে একটি বাইনারি স্টার সিস্টেমে (দ্বৈত নক্ষত্রমণ্ডল) পৃথিবীর আকারের তিনটি নতুন গ্রহের সন্ধান পেয়েছে। মহাকাশ গবেষণার জগতে এই আবিষ্কার কেবল একটি নতুন অনুসন্ধান নয়, এটি একটি রেকর্ড ব্রেকার!

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এইরকম কম্প্যাক্ট বাইনারি সিস্টেমে গ্রহের সৃষ্টি হওয়া প্রায় আসাম্ভব বলেই মনে করা হতো। সেখানে একটি নয়, বরং তিনটি পাথুরে গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই গ্রহগুলি থেকে দেখলে ‘স্টার ওয়ার্স’ সিনেমার ট্যাটুইন গ্রহের মতো একইসঙ্গে দু’বার সূর্য অস্ত যেতে দেখা যাবে। অর্থাৎ, এই গ্রহের আকাশ থেকে দুটি সূর্যকে ডুবতে দেখা যাবে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই গ্রহগুলিও পৃথিবীর মতো জীবন বিকাশের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এতদিন একক নক্ষত্রমণ্ডল নিয়ে যে তত্ত্ব প্রচলিত ছিল, এই আবিষ্কার তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের কাছে এই জায়গাটি এখন একটি বাস্তব-জীবনের ল্যাবরেটরি, যেখান থেকে নতুন গ্রহ বিজ্ঞান লেখা হবে।

গ্রহ সৃষ্টি যেখানে আসাম্ভব, সেখানে ৩টি পৃথিবীর মতো জগৎ

TOI-2267 হলো একটি কম্প্যাক্ট বাইনারি সিস্টেম। এই সিস্টেমে থাকা দুটি নক্ষত্র একে অপরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। সেই কারণে, তাদের মহাকর্ষীয় প্রভাব বা ‘গ্র্যাভিটি গেম’ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং অস্থির বলে মনে করা হয়। প্রচলিত তত্ত্ব অনুসারে, এইরকম পরিবেশে গ্রহ তৈরি হতে পারে না। আর তৈরি হলেও তারা স্থিতিশীল থাকতে পারে না। কিন্তু এই তিনটি গ্রহ সেই তত্ত্বকে সরাসরি অস্বীকার করছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, এই গ্রহগুলির মধ্যে দুটি একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে এবং অন্য গ্রহটি তার সঙ্গী নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। এই প্রথম কোনো বাইনারি সিস্টেমে দুটি নক্ষত্রের চারপাশে প্রদক্ষিণরত গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেল।

গ্রহ অনুসন্ধানে নতুন রেকর্ড

গবেষক দলের মতে, এটি এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া গ্রহ সহ সবচেয়ে কম্প্যাক্ট ও শীতলতম নক্ষত্রের জুটি। এই আবিষ্কার একাধিক স্তরে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। TESS-এর তথ্য SHERLOCK সফ্টওয়্যার স্ক্যান করেছে। এরপর এই সংকেত নিশ্চিত করার জন্য SPECULOOS এবং TRAPPIST টেলিস্কোপ নেটওয়ার্ক কাজ করেছে। এই অত্যাধুনিক সরঞ্জামগুলির সাহায্যেই গ্রহগুলির সঠিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে।

‘স্টার ওয়ার্স’-এর ট্যাটুইনের মতো দুই সূর্যের সন্ধ্যা

এই আবিষ্কারকে পপ সংস্কৃতির প্রতীক করে তুলেছে দুটি সূর্য এবং দুটি সূর্যাস্তের দৃশ্য, যা ‘স্টার ওয়ার্স’ মুভিতে লুক স্কাইওয়াকারকে দেখতে পাওয়া যায়। মহাকাশ সংস্থাগুলির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পরিবেশ গ্রহের স্থিতিশীলতার উপর কী প্রভাব ফেলে, তা এখন গবেষণার মূল বিষয় হবে।

পরবর্তী পর্যায়ে এই গ্রহগুলির ভর, ঘনত্ব এবং বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ-এর সাহায্য নেওয়া হবে। যদি পাথুরে গ্রহগুলি এমন চরম সিস্টেমে টিকে থাকতে পারে, তবে জীবনের সম্ভাবনাযুক্ত স্থানগুলির তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *