আপনার এই ৭ অভ্যাসেই চুপিসারে বিকল হচ্ছে কিডনি? ডাক্তাররা কেন বলছেন ‘বিপজ্জনক লাইফস্টাইল’ – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কিছু ছোট ছোট ভুল অভ্যাসই নীরবে আপনার শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ডাক্তাররা এসব অভ্যাসকে ‘বিপজ্জনক লাইফস্টাইল’ আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এখনই এই অভ্যাসগুলো না শুধরানো হয়, তবে কিডনি ড্যামেজ হতে বেশি দেরি লাগবে না।
আমাদের অজান্তেই এমন কিছু অভ্যাস তৈরি হচ্ছে, যা কিডনির শত্রু হয়ে উঠছে। ঘুম থেকে শুরু করে খাবার ও পানীয়ের অভ্যাসগুলো সরাসরি কিডনির কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলে। এমনকি অনেক সময় আচমকা কিডনি বিকল হওয়া বা কিডনি ফেলিওর হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে সবার আগে আপনার জীবনধারা পরিবর্তন করা অপরিহার্য।
আসলে কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্ত থেকে বর্জ্য, অতিরিক্ত তরল এবং সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো ইলেক্ট্রোলাইট ফিল্টার করে বের করে দেওয়া। শরীরে এই উপাদানগুলোর সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে কিডনি সাহায্য করে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিডনি ঠিক থাকলে রক্তচাপ, লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন এবং ক্যালসিয়ামের ভারসাম্যও সঠিক থাকে। কিন্তু কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলেই শরীরে বিষাক্ত পদার্থ দ্রুত জমতে শুরু করে এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা শরীরের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
কিডনির সুরক্ষার জন্য আজই ত্যাগ করুন এই ৭ অভ্যাস:
- কম জল পান করা: কিডনি রক্ত পরিশোধন করে, যার জন্য পর্যাপ্ত জলের প্রয়োজন। যারা কম জল পান করেন, তাদের কিডনির ওপর চাপ পড়ে। বিশেষত গরমকালে এটি আরও মারাত্মক হতে পারে এবং এর ফলে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকিও বহুগুণ বেড়ে যায়। কিডনি সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৩ লিটার জল পান করা উচিত।
- অতিরিক্ত মদ্যপান: অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপান করা লিভারের পাশাপাশি কিডনির জন্যও বিপজ্জনক। অ্যালকোহল শরীরে ডিহাইড্রেশন বা জলের ঘাটতি তৈরি করতে পারে, যা কিডনির কাজ করার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বাড়ায় এবং কিডনির ক্ষতি করে।
- ধূমপান: ধূমপান কেবল ক্যান্সার বা হৃদরোগের ঝুঁকিই বাড়ায় না, এটি একাধিক উপায়ে কিডনিকেও সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে। সিগারেটের ধোঁয়ায় ক্যাডমিয়ামের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
- অতিরিক্ত ওজন: স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন শরীরের সবচেয়ে বড় শত্রু। এর প্রভাব কিডনির উপরেও পড়ে। ১৮.৫ থেকে ২৪.৯-এর মধ্যে বডি মাস ইনডেক্স (BMI) থাকা স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। এর বেশি হলে তা স্থূলতার শ্রেণিতে পড়ে। বিশেষত কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত ফ্যাট জমা কিডনি, লিভার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের জন্য খুবই বিপজ্জনক।
- বাইরের খাবার বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য: বেশি প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা খাবার, অতিরিক্ত ফ্যাট, চিনি, কৃত্রিম রঙ ও স্বাদযুক্ত খাবার বা রাসায়নিক দিয়ে সংরক্ষিত খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সসেজ, কার্বনেটেড সফট ড্রিংক, প্যাকেজড ব্রেড এবং মিটের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
- যথাযথ ঘুম না হওয়া: আপনি যদি পর্যাপ্ত এবং ভালো মানের ঘুম না পান, তবে তার প্রভাব কিডনির উপরও পড়ে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের গুণমান এবং সময় ক্রনিক কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই রোজ ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি।
- ব্যথানাশক ওষুধ: সামান্য ব্যথা হলেই যদি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘন ঘন ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করেন, তবে আজই এই অভ্যাস ত্যাগ করুন। বিশেষ করে নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ব্যথানাশক ট্যাবলেট (NSAID) কিডনির উপর খারাপ প্রভাব ফেলে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করতে পারে।