নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার আগেই তড়িঘড়ি কেন ৫২৭ অফিসারের বদলি? মমতার এই সিদ্ধান্তে তোলপাড় বাংলা! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির পারদ এখন তুঙ্গে। এর মধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে বড়সড় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নির্বাচন কমিশনের এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়া শুরুর ঠিক আগে তড়িঘড়ি ৫২৭ জন উচ্চপদস্থ আধিকারিকের বদলির নির্দেশ জারি করেছে।

এই বিশাল প্রশাসনিক রদবদলে ৬১ জন আইএএস এবং ৪৬০ জনেরও বেশি পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস (ডব্লিউবিসিএস) আধিকারিক অন্তর্ভুক্ত। ১৪টি জেলার জেলাশাসক (ডিএম) এবং আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা আধিকারিকদের এই রদবদল করা হয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর এই সংক্রান্ত নির্দেশ জারি হয়। তবে এই আদেশ রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে দু’টি পর্যায়ে আপলোড করা হয়েছিল—প্রথমটি নির্বাচন কমিশনের সাংবাদিক বৈঠকের আগে এবং দ্বিতীয়টি তার পরে। এই অস্বাভাবিক দ্রুততায় বদলির কারণে রাজনৈতিক মহলে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে।

বিজেপির কটাক্ষ: ‘ভোট কমার ভয়’

ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই বদলিকে ‘ভুয়ো ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ পড়ার ভয়’ হিসেবে দেখছে। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) আশঙ্কা করছে যে এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি ভুয়ো ভোটারদের নাম বাদ যায়, তবে তাদের ভোটব্যাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, শেষ মুহূর্তে এত বড় রদবদল করে মমতা সরকার এসআইআর প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

তৃণমূলের দাবি: ‘রুটিন প্রশাসনিক পরিবর্তন’

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই সব অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। শাসক দলের তরফে এই রদবদলকে ‘রুটিন ট্রান্সফার’ বা স্বাভাবিক প্রশাসনিক পরিবর্তন হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, প্রতি বছরই প্রশাসনিক রদবদল হয়ে থাকে এবং বিরোধীরা অযথা এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচন কমিশন যখন আগেই জানিয়েছিল যে নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়ে গেলে যেকোনো বদলির জন্য কমিশনের অনুমোদন বাধ্যতামূলক, তখন এত তাড়াহুড়ো করে এই গণ-বদলি কেন করা হলো?

বদলে গেলেন কোন কোন জেলার জেলাশাসক?

উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদা, দার্জিলিং, কোচবিহার এবং হাওড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জেলার জেলাশাসকদের এই রদবদলের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু বিশেষ সচিব ও কমিশনারের পদেও পরিবর্তন এসেছে, যা পুরো প্রশাসনিক কাঠামোয় এক প্রকার অস্থিরতা তৈরি করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দলের একটি বৈঠক ডেকে এই বিষয়ে দ্রুত রিপোর্ট চেয়েছে। কমিশনের এই পদক্ষেপ বাংলার রাজনীতিতে এক নতুন সংঘাতের জন্ম দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *