বুলডোজার চালিয়ে গরিবের রুজিতে কোপ, এই এসিপি’র পরিণতি কী হলো? রাতারাতি বদলি – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
হরিয়ানার বাহাদুগড়ে ফুটপাতের গরিব হকারদের দোকানপাটে বুলডোজার চালানোর ঘটনায় বিপাকে পড়লেন ট্রাফিক এসিপি দীনেশ কুমার। গরিব দোকানদারদের রুজি-রোজগারে আঘাত হানার এই ঘটনা তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অবশেষে ওই এসিপি’র বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নিল প্রশাসন।
জানা গিয়েছে, এসিপি দীনেশ কুমারকে বর্তমানে ঝাজ্জর হেডকোয়ার্টার্সে সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করা হয়েছে। ঝাজ্জরের পুলিশ কমিশনার ড. রাজশ্রী সিং এই বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই দীনেশ কুমার বাহাদুগড়ে ট্রাফিক এসিপি’র দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এর আগে তিনি শহরের ট্রাফিক এসএইচও হিসাবেও কাজ করেছেন এবং সে সময়ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে তাঁর কড়া পদক্ষেপ আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
তবে, এই নিয়ে দ্বিতীয়বার বিতর্কে জড়ালেন তিনি। এর আগে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ওয়ার্ড ২৭-এর এক কাউন্সিলরের ছেলের সঙ্গে বচসার জেরে তাঁর বদলি হয়েছিল। কিন্তু এবারের ঘটনা এতটাই জলঘোলা করেছে যে, হরিয়ানার ডিজিপি ওপি সিং এবং ঝাজ্জরের ডিসিপি ময়ঙ্ক মিশ্রাকেও প্রকাশ্যে এই বিষয়ে বিবৃতি দিতে হয়েছে।
ঝাজ্জরের পুলিশ কমিশনার ড. রাজশ্রী সিং রবিবার তাঁর ফেসবুকে লেখেন, “আমরা জানি যে আমরা গরিব, মজলুম ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সম্পূর্ণ খেয়াল রাখি। আমরা কারও ভাবাবেগে আঘাত করি না। এসিপি দীনেশ কুমার একজন রেকর্ডধারী ক্রীড়াবিদ। তাঁর উদ্দেশ্য কাউকে কষ্ট দেওয়া ছিল না। তবুও, আমরা কথা দিচ্ছি কারও সঙ্গে কোনো রকম বাড়াবাড়ি হবে না। আমরা হকার ও দোকানদারদের কাছে আবেদন করছি, রাস্তায় যাতে দখল না হয়, তাতে পথচারীদের অসুবিধা হয় না এবং যাতায়াত নিরাপদ থাকে।”
বুলডোজার চালানোর ভিডিওটি স্বয়ং এসিপি দীনেশ নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন। বাহাদুগড়ের প্যাটেল নগর এলাকায় ২০০ ফুটা রোডে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ভিডিওতে তাঁকে হকারদের দোকান সরাতে দেখা গিয়েছিল। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র ক্ষোভ দেখা যায়। অনেকে এটিকে ‘গরিবের উপর জুলুম’ বলে মন্তব্য করেন। কংগ্রেসও এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়। বিতর্ক বাড়তে থাকায় এসিপি দীনেশ ভিডিওটি সরিয়ে নিলেও ততক্ষণে লাখ লাখ মানুষ সেটি দেখে ও শেয়ার করে ফেলেছেন।
এই ঘটনার জেরে সোমবার হরিয়ানার ডিজিপি ওপি সিংকেও মুখ খুলতে হয়। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “আমি বাহাদুগড়ের ডিসিপি এবং ঝাজ্জরের সিপি’র সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। এসিপি দীনেশ একজন আন্তর্জাতিক বক্সার এবং স্পোর্টস কোটায় পুলিশে যোগ দিয়েছেন। তাঁর কাজ ছিল রাস্তা খালি রাখা, কিন্তু সবজির ঝুড়িতে বুলডোজার চললে বিতর্ক তো হবেই। আমি সিপি’কে বলেছি, ফিল্ড অফিসারদের ক্যামেরার এই যুগে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক।”
ডিজিপি এই প্রসঙ্গে একটি উর্দু শেরও (কবিতা) শেয়ার করেন—”মুখতসর সি জিন্দেগি কে আজীব সে আফসানে হ্যায়, ইয়াহাঁ তীর ভি চালানে হ্যায় ঔর পারিন্দে ভি বাচানে হ্যায়” (ছোট্ট জীবনের অদ্ভুত কাহিনি, যেখানে তীরও ছুঁড়তে হবে আবার পাখিদেরও বাঁচাতে হবে)। অন্যদিকে, ঝাজ্জরের ডিসিপি ময়ঙ্ক মিশ্রা জানান, পুলিশের উদ্দেশ্য সঠিক থাকলেও পদক্ষেপের পদ্ধতি ভুল ছিল। ডিজিপি স্পষ্ট জানিয়েছেন, এসিপি দীনেশকে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।