হঠাৎই ই-শ্রম কার্ডধারীদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লো? প্রতি মাসে ৩০০০ টাকার সুবিধা পেতে কী করতে হবে! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

ভারত সরকারের ই-শ্রম কার্ড প্রকল্প অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। এই কার্ডের মাধ্যমে এখন ধারকরা প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত পেনশনসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মানধন যোজনা (PM-SYM) এই সুবিধা নিশ্চিত করছে।

আসুন, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং মাসিক পেনশনের সুবিধা পাওয়ার বিস্তারিত নিয়ম, যোগ্যতা ও আবেদন প্রক্রিয়া জেনে নেওয়া যাক।

ই-শ্রম কার্ড আসলে কী?

ই-শ্রম কার্ড হল ভারত সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক কর্তৃক অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য জারি করা একটি ডিজিটাল পরিচয়পত্র। নির্মাণ শ্রমিক, হকার, গৃহকর্মী এবং গিগ ওয়ার্কার-সহ বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমিকদের একটি জাতীয় ডেটাবেস তৈরি করাই এর মূল উদ্দেশ্য। এই কার্ডের মাধ্যমে শ্রমিকরা বিভিন্ন সরকারি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মানধন যোজনা (PM-SYM), সহজে পাওয়ার সুযোগ পান।

৩০০০ টাকার মাসিক পেনশন কী উপায়ে মেলে?

প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মানধন যোজনা (PM-SYM) হলো অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষ পেনশন প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় যোগ্য ই-শ্রম কার্ডধারীরা ৬০ বছর বয়সের পর প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা করে পেনশন পান। এই অর্থ সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়, যা বার্ধক্যে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।

মানধন যোজনার মূল সুবিধা কী কী?

  • মাসিক পেনশন: ৬০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা নিশ্চিত পেনশন।
  • আর্থিক সুরক্ষা: বার্ধক্যে নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা, যা দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক।
  • স্বচ্ছ লেনদেন: পেনশনের টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়, ফলে দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ কম।
  • সামাজিক নিরাপত্তা: অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা পান সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা।
  • পরিবারকে সহায়তা: যদি কার্ডধারীর মৃত্যু হয়, তবে তার স্বামী বা স্ত্রী নিয়মানুযায়ী পেনশনের অর্ধেক সুবিধা পেতে পারেন।

কারা এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন?

মানধন যোজনায় আবেদনের জন্য ই-শ্রম কার্ডধারীদের নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করতে হবে:

  • অবশ্যই একটি ই-শ্রম কার্ড থাকতে হবে।
  • আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • মাসিক আয় ১৫,০০০ টাকার কম হতে হবে।
  • আবেদনকারীকে নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালক বা গিগ ওয়ার্কারের মতো অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক হতে হবে।
  • আবেদনকারীকে ভারতের নাগরিক হতে হবে।
  • EPFO বা ESIC-এর মতো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সদস্য হওয়া যাবে না।
  • আবেদনকারী আয়করদাতা হতে পারবেন না।

আবেদন প্রক্রিয়া কী?

ই-শ্রম কার্ডধারীরা অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মানধন যোজনার জন্য আবেদন করতে পারেন:

অনলাইন আবেদন

১. প্রথমে mandhan.in ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।

২. “Click Here to Apply Now” বিকল্পে ক্লিক করে ‘সেলফ রেজিস্ট্রেশন’ বেছে নিন।

৩. আধার নম্বর, মোবাইল নম্বর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সাবধানে পূরণ করুন।

৪. আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বিবরণের মতো প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করুন।

৫. সমস্ত তথ্য যাচাই করে ফর্ম জমা দিন। আবেদন অনুমোদিত হলে একটি নিশ্চিতকরণ বার্তা পাবেন।

অফলাইন আবেদন

১. নিকটস্থ কমন সার্ভিস সেন্টার (CSC) বা লোক সেবা কেন্দ্রে যান।

২. প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি জমা দিন।

৩. অপারেটরের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করান।

৪. ফি প্রদান করে রসিদ সংগ্রহ করুন।

আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি:

  • আধার কার্ড
  • ই-শ্রম কার্ড
  • ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পাসবুক
  • মোবাইল নম্বর (আধার সংযুক্ত)
  • প্যান কার্ড (যদি থাকে)
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • ইমেল আইডি (ঐচ্ছিক)

অন্যান্য সুবিধা

মানধন যোজনা ছাড়াও ই-শ্রম কার্ডধারীরা আরও অনেক সুবিধা পান:

  • দুর্ঘটনা বীমা: মৃত্যু বা সম্পূর্ণ অক্ষমতার ক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকা এবং আংশিক অক্ষমতার জন্য ১ লক্ষ টাকার বীমা কভার।
  • স্বাস্থ্য বীমা: আয়ুষ্মান ভারত যোজনার আওতায় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা।
  • আর্থিক সহায়তা: কিছু রাজ্যে মাসিক ১০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য।
  • ক্রেডিট কার্ড: রাস্তার বিক্রেতাদের জন্য ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড সুবিধা।
  • কর্মসংস্থানের সুযোগ: দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নতুন চাকরির সুযোগ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *