ট্রেন! চোখের নিমেষে জলের তোড়ে ভেসে গেল রেলের বগি, কী ঘটেছিল সেদিন? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
প্রবল বৃষ্টি আর প্রকৃতির রোষের মুখে ভেঙে পড়া রেল সেতু। আর সেই সেতুর উপর দিয়েই ছুটে আসছিল দ্রুত গতির ট্রেন। লোকো পাইলট পেলেন না কোনো সতর্কবার্তা। মুহূর্তের মধ্যে রেললাইন জলে ভেসে যাওয়ায় ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি জলের তোড়ে ভেসে গেল। ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল ঠিক ২০ বছর আগে, অন্ধ্র প্রদেশে। সেই দিনের অভিজ্ঞতা এখনো অনেকের কাছে বিভীষিকা।
আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগে ২০০৫ সালের ২৯ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশের নালগোন্ডা জেলার ভেলিগোন্ডার কাছে দুপুর প্রায় সাড়ে ৩টের দিকে ঘটেছিল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রাপাল্লে-সেকেন্দ্রাবাদ ডেল্টা ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি তার গন্তব্যের আর মাত্র এক ঘণ্টা দূরে ছিল। যাত্রীদের অনেকেই তখন নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। নদীর জলস্তর অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যাওয়ায় একটি ছোট রেল সেতু ভেঙে যায়।
লোকো পাইলটের কাছে সেতু ভেঙে পড়ার কোনো খবর ছিল না। তিনি স্বাভাবিক গতিতেই ট্রেন চালাচ্ছিলেন। কিন্তু ট্রেনটি যেই মাত্র ভাঙা সেতুর উপর পৌঁছায়, ইঞ্জিন এবং তার পেছনের সাতটি বগি সশব্দে লাইনচ্যুত হয়ে প্রবল স্রোতের নালায় তলিয়ে যায়। জানা যায়, সেদিন ওই এলাকায় গত ৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙে ৩২ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।
দুর্ঘটনার পর চারদিকে চরম বিশৃঙ্খলা ও হাহাকার শুরু হয়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মোট ১১৪ জন যাত্রী প্রাণ হারান এবং আহত হন দুশো জনেরও বেশি মানুষ। দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু হলেও ভারী বৃষ্টির কারণে এয়ারফোর্সের হেলিকপ্টারগুলো মাটিতে নামতে পারছিল না। ফলে রশির সাহায্যে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় মানুষ, সেনা ডুবুরি, রেল সুরক্ষা বাহিনী (আরপিএফ), র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ) এবং অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ যৌথভাবে এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়।
দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে এবং সেচ দফতর একে অপরের উপর দায় চাপিয়েছিল। রেলের দাবি ছিল যে রামাসমুদ্রম জলাধার থেকে জল ছাড়ার কোনো তথ্য তাদের দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে সেচ দফতর জানায়, সেই রাতে জলাধার থেকে বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছিল।
তদন্তে জানা যায়, দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেও দুটি ট্রেন ওই লাইন দিয়ে নিরাপদে পার হয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিতে রেললাইন টহলদার কর্মী বন্যার জলে ভেসে যাওয়ায় সময়মতো সতর্কবার্তা দিতে পারেননি। জানা গেছে, সহকারী লোকো পাইলট দূর থেকে লাইন জলে ভাসতে দেখেন। কিন্তু মূল চালককে সতর্ক করার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তবে চালক সময়মতো ইমার্জেন্সি ব্রেক কষায় ট্রেনের বাকি বগিগুলি রক্ষা পায় এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়।