১৩ বছর আগে যাকে মৃত ভেবে গঙ্গায় ভাসানো হয়েছিল, সে আজ জীবিত! দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকল ‘মা’ – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলার ঔরঙ্গাবাদ অঞ্চলের সুরজপুর টিকরি গ্রামে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা সামনে এসেছে, যা শুধু পরিবার নয়, গোটা এলাকার মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। ১৩ বছর আগে যে যুবককে সাপের কামড়ে ‘মৃত’ মনে করে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসেছে। এই ঘটনা ঘিরে গ্রামে তৈরি হয়েছে চরম কৌতূহল—এ কি অলৌকিক ঘটনা নাকি বিজ্ঞান ও অন্ধবিশ্বাসের এক জীবন্ত সংঘাত?
১৩ বছর আগে সাপে কামড়েছিল দীপুকে
সুরজপুর টিকরি গ্রামের সুখপাল সাইনির ছেলে দীপু সাইনিকে ১৩ বছর আগে একটি বিষাক্ত সাপে কামড়ায়। বাবা সুখপাল সাইনি জানান, দীপু খড়ের কোঠা থেকে কাস্তে আনতে গিয়েছিল, তখনই তাকে সাপে ছোবল মারে। অনেক চিকিৎসার পরেও যখন তার নিঃশ্বাস থেমে যায়, তখন পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসী তাকে মৃত বলে ধরে নেন।
‘গঙ্গায় ভাসানোর’ প্রথা বদলে দিল জীবন
গ্রামে একটি প্রাচীন বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে, সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তিকে দাহ বা কবর দেওয়া হয় না, বরং অলৌকিক উপায়ে জীবন ফিরে পাওয়ার আশায় তাকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। দীপুর পরিবারও সেই প্রথা মেনে তাকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়।
তন্ত্র-মন্ত্র না কি নিছকই কাকতাল?
দীপুর মা সুমন দেবী জানিয়েছেন, কিছু সাপুড়ে গঙ্গাতীর থেকে দীপুকে উদ্ধার করে এবং তাকে হরিয়ানার পালওয়ালে নিয়ে যায়। সেখানে এক বাঙালি বাবার আশ্রমে তন্ত্র-মন্ত্র ও জড়ি-বুটির মাধ্যমে তার চিকিৎসা শুরু হয়। পরিবারের দাবি, ওই বাবা চিকিৎসার জন্য দীপুকে পশ্চিমবঙ্গেও নিয়ে যান, যেখানে সে কয়েক বছর ছিল। প্রায় সাত বছর পর সে সুস্থ হয়ে ওঠে এবং পালওয়াল এলাকাতেই থাকতে শুরু করে।
কানের চিহ্ন ও পরিবারের স্বীকৃতিতে পর্দাফাঁস
প্রায় এক বছর আগে দীপুর পরিবার খবর পায় যে, পালওয়ালে তাদের ছেলের চেহারার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ এক যুবক রয়েছে। সেখানে পৌঁছে পরিবার কান-এর পিছনের একটি বিশেষ চিহ্ন দেখে তাকে শনাক্ত করে। একইসঙ্গে দীপুও তার পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারে। আশ্রমের সাধুসন্তরা এক বছর পর, ২৫ অক্টোবর তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেন।
গ্রামে উৎসব, বিজ্ঞানের দরবারে প্রশ্ন
দীপুর প্রত্যাবর্তনে পরিবারে আনন্দের জোয়ার। গ্রামবাসী দ্বিধাবিভক্ত: এক পক্ষ এটিকে ‘ঈশ্বরের অলৌকিক ঘটনা’ মানছেন, আর অন্যদিকে ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো মৃত ব্যক্তির পক্ষে আবার জীবিত হওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের মতে, হয়তো সাপের কামড়ের পর দীপু কোমার মতো অবস্থায় ছিল অথবা ভুলবশত তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে আসল সত্য আজও রহস্যের আড়ালে।
দীপুর মুখে কী?
নিজের গ্রামে ফিরে আসা দীপু জানায়, “আমার মনে আছে, সাপে কামড়েছিল। তারপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এখন আমি নিজের পরিবারের মধ্যে আছি, খুব ভালো লাগছে। ভগবান আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন।”