৩৫০০ লিটার দুধ উৎপাদনকারী এই মহিষগুলি কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে, কম খরচে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

দুগ্ধ ব্যবসায় নতুন দিশা

আপনার মনে কি প্রশ্ন আসছে, চাষের পাশাপাশি কীভাবে বছরে লাখ লাখ টাকা উপার্জন সম্ভব? সম্প্রতি কৃষকদের মধ্যে বিশেষ কিছু জাতের মহিষ পালন করে ধনী হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, যেখানে ফসলের লাভ কমে যাচ্ছে, সেখানে এই বিশেষ ধরণের মহিষ পালন গ্রামীণ অর্থনীতিতে কার্যত আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই মহিষ পালন এখন কৃষকদের আয়ের অন্যতম ভরসা।

বছরে ৩৫০০ লিটার! এই দুই জাতের মহিষ কেন ‘কুবেরের ধন’?

বর্তমানে মহিষের যে দুটি জাত দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য আলোচনার কেন্দ্রে, তারা হলো নীলি রবি এবং মুররাহ (Murrah)। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মহিষগুলোকে ‘কুবেরের ধন’ বলা হচ্ছে কারণ এরা বছরে প্রায় ৩,০০০ থেকে ৩,৫০০ লিটার পর্যন্ত দুধ দিতে সক্ষম। কৃষকদের জন্য এগুলি এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

এই মহিষগুলির আরও একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এরা প্রতি ১২ থেকে ১৫ মাস অন্তর বাচ্চা দেয়, ফলে দুধের উৎপাদন নিয়মিত থাকে। এদের দুধে ফ্যাটের পরিমাণ প্রায় ৬.৫% থেকে ৮% পর্যন্ত থাকে, যার কারণে বাজারে এদের দুধের চাহিদা এবং দাম দুটোই অনেক বেশি। শারীরিক গঠনে মজবুত হওয়ায় এরা গ্রীষ্ম এবং শীত, উভয় আবহাওয়ার সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে এবং তুলনামূলকভাবে কম অসুস্থ হয়, ফলে চিকিৎসার খরচও কমে আসে।

কম খরচে বেশি লাভ: পালন পদ্ধতি কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

মহিষ পালনের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না, এমনকি বিশাল অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগের দরকারও নেই। শুধু প্রয়োজন হয় ছায়াযুক্ত এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে এমন একটি জায়গা, যেখানে মহিষেরা গরমে আরাম পেতে পারে। এদের খাদ্যতালিকায় সবুজ ঘাস, তুষ, দানাশস্য এবং মিনারেল মিক্সচার থাকা জরুরি। পরিষ্কার পানীয় জল এবং সুষম খাদ্যের মাধ্যমে দুধের পরিমাণ ও মান বাড়ে। সুস্থতা এবং বেশি দিন ধরে দুগ্ধ উৎপাদন নিশ্চিত করতে মহিষদেরকে প্রতিদিন স্নান করানো ও শীতল পরিবেশে রাখা দরকার।

পরিচর্যার গোপন কথা: লখপতি হওয়ার মূলমন্ত্র

মহিষ পালনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সঠিক সময়ে টিকা দেওয়া। বাথান যদি পরিষ্কার এবং শুকনো থাকে, তবে সংক্রমণের ঝুঁকি প্রায় থাকে না। পাশাপাশি, সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষার জন্য সময়মতো পশুর টিকা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। দুধ দোহনের জন্য সকাল-সন্ধ্যা একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা উচিত। এতে দুধের গুণমান ও পরিমাণ দুই-ই ভালো থাকে।

আয়ের অঙ্ক: বছরে ৩-৪ লাখ টাকা কীভাবে আসছে?

যদি একটি মহিষ প্রতিদিন ১০ লিটার দুধ দেয়, তবে বছরে সে প্রায় ৩,৫০০ লিটার দুধ দিতে পারে। এই পরিমাণ দুধ বিক্রি করে একজন কৃষক বছরে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। যদি কোনো কৃষক ৩ থেকে ৪টি মহিষ পালন করেন, তাহলে তার বার্ষিক আয় সহজেই ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকায় পৌঁছাতে পারে। এই কারণেই কৃষকেরা এই জাতের মহিষকে ‘কুবেরের ধন’ বলছেন। যেহেতু এই দুধের ফ্যাট বেশি, তাই বড় বড় ডেয়ারি কো ম্পা নিগুলোতেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং বাজারমূল্যও পাওয়া যায় তুলনামূলকভাবে বেশি।

এই বৈজ্ঞানিক এবং লাভজনক মহিষ পালন পদ্ধতি গ্রামীণ অর্থনীতিকে নতুন শক্তি যোগাচ্ছে, যার ফলে অনেক কৃষক এখন কেবল স্বনির্ভরই নন, অন্যদেরও কর্মসংস্থান জোগাতে সক্ষম হচ্ছেন।

Admin
  • Admin

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *