নারীদের ঘ্রাণশক্তি পুরুষদের তুলনায় বেশি কেন? – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

নিশ্চয় আপনি দুধের বোতল শুকে দেখেন সেটি খারাপ হয়েছে কিনা। এটি আমাদের প্রতিদিনের জীবনের একটি স্বাভাবিক আচরণ। কিন্তু এই ছোট সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করে একটি জটিল জেনেটিক ও প্রোটিনের প্রক্রিয়া। জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক এপিডেমিওলজিস্ট মার্কুস শোলজের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল আমাদের ঘ্রাণ অনুভূতির জেনেটিকসকে আগের চেয়ে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছে।

তারা বলেন, আমরা এমন ১০টি জেনেটিক অঞ্চল চিহ্নিত করেছি যা নির্দিষ্ট গন্ধ চেনার ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত, যার মধ্যে সাতটিই নতুন আবিষ্কার। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ‘স্নিফিন স্টিকস’-এর মাধ্যমে ১২টি গন্ধ শনাক্ত করতে বলা হয়। এরপর তাদের সঠিক উত্তরগুলো মিলিয়ে দেখা হয় লক্ষাধিক সিঙ্গেল-নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজমস-এর সঙ্গে। এতে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য একটি ব্যক্তিগত গন্ধ স্কোর তৈরি করা হয়।

দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল পাওয়া গেছে ঘ্রাণ রিসেপ্টর জিন ক্লাস্টার-এর মধ্যে এবং অন্যগুলো এমন কিছু এনজাইমকে নির্দেশ করে যা গন্ধের রাসায়নিক সংকেতকে বৈদ্যুতিক সংকেত হিসেবে রূপান্তরিত করে। নারীরা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় গন্ধ শনাক্ত করতে বেশি দক্ষ। এটি বিশ্বজুড়ে দেখা যায়। গবেষণায় তিনটি জিনোমিক অঞ্চল পাওয়া গেছে যেগুলির প্রভাব নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন। যেমন একটি ভেরিয়ান্ট নারীদের ক্ষেত্রে কমলা গন্ধ শনাক্ত করার সম্ভাবনা তিনগুণ বাড়ায়, কিন্তু পুরুষদের উপর কোনও প্রভাব ফেলে না। গবেষণা বলছে, ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়লে নারীদের গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। আর টেস্টোস্টেরনের প্রভাব তা হ্রাস করে। তাই মাসিকচক্র কিংবা গর্ভাবস্থায় নারীদের ঘ্রাণ পরিবর্তনের ঘটনা বৈজ্ঞানিকভাবে এখন আরও সুস্পষ্ট। এটি একটি নৃবিজ্ঞানভিত্তিক তত্ত্ব যা বলে যে গর্ভাবস্থায় নারীর বাড়তি ঘ্রাণ সংবেদনশীলতা ভ্রূণ রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিটি গন্ধের জন্য ডিএনএ-র আলাদা অংশ কাজ করে। যেমন, দারচিনির গন্ধ শনাক্ত করতে সহায়তা করে একটি নির্দিষ্ট জিন। আবার আনারসের জন্য দুটি আলাদা জেনেটিক অঞ্চল সক্রিয়। একটি গন্ধ বাদ দিলে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জিনগত সংকেতও মিলিয়ে যায়। এটি প্রমাণ করে প্রতিটি ভেরিয়ান্টের প্রভাব নির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যভিত্তিক। যেমন, আপনার “আনারস জিন” পুদিনা শনাক্ত করতে সাহায্য করে না।

আলঝেইমার রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর একটি হল ঘ্রাণ হারানো। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের আলঝেইমারের ঝুঁকি বেশি তাদের গন্ধ চেনার স্কোর কম হয়। তবে খারাপ ঘ্রাণ পারফরম্যান্স মানেই আলঝেইমারের সম্ভাবনা নেই। একটি শক্তিশালী জিন যা কোষের মধ্যে উপাদান সরানোর সঙ্গে জড়িত সেটিই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী সংযোগ এবং এটি প্রায়ই আলঝেইমার সংক্রান্ত আরেকটি জিনের পাশে পাওয়া যায়। বায়োইনফরম্যাটিক স্ক্যানে দেখা গেছে পুরুষ-নারীর ভিন্ন ভিন্ন ভেরিয়ান্টের পাশে ৪০টির বেশি অ্যান্ড্রোজেন-মোটিফ আছে, কিন্তু ইস্ট্রোজেন-মোটিফ অনেক কম। তবুও জেনোমিক স্তরে টেস্টোস্টেরন বা সংশ্লিষ্ট হরমোনের সরাসরি প্রভাব পাওয়া যায়নি। গবেষকরা বলছেন, বড় অংশগ্রহণকারী দলের প্রয়োজন হতে পারে এই সূক্ষ্ম প্রভাবগুলো চিহ্নিত করতে। গবেষণাগারগুলি এখন CRISPR প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘ্রাণ স্নায়ুকোষে সংশ্লিষ্ট মোটিফ পরিবর্তন করে দেখবে হরমোন কিভাবে জিনের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে। এই গবেষণা মানুষকে ঘ্রাণ, স্মৃতি ও হরমোনের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এনে দিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *