নেশার এক চুমুক! মদ্যপান করলে কেন ‘ভীতু’ মানুষও নিজেকে ‘সাহসী’ মনে করে? আসল রহস্য ফাঁস! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

অনেকেরই ধারণা, আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সামান্য মদ্যপান। বন্ধুদের আড্ডায় প্রাণ খুলে কথা বলা হোক বা মনের কথা প্রকাশ করা, এমনকি মঞ্চে ওঠার ভয় কাটানো—অনেকের কাছেই মদ হলো ‘সাহসের পানীয়’।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, মদ কি সত্যিই মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, নাকি তা কেবলই মস্তিষ্কের সাময়িক বিভ্রম?

আসলে, মদ যখন শরীরে প্রবেশ করে, তখন তা মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার বা রাসায়নিকের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। এক্ষেত্রে গাবা (GABA – Gamma-Aminobutyric Acid) নামক একটি রাসায়নিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মদ এই গাবা-এর মতোই কাজ করে মস্তিষ্কের কার্যকলাপকে ধীর করে দেয়। এর ফলে ব্যক্তি সাময়িক আরাম পায়, দুশ্চিন্তা কমে যায় এবং তার মধ্যে একটি মিথ্যে ‘নিরাপত্তা বোধ’ তৈরি হয়। অনেকেই যে বলেন ‘এক পেগ খেলেই সব ভয় দূর’, তার পেছনে রয়েছে এই রাসায়নিকের কারসাজি।

শুধু তাই নয়, মদ মস্তিষ্কের ‘প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ অংশকেও প্রভাবিত করে। এই অংশটিই আমাদের যুক্তি, নিয়ন্ত্রণ এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। যখন এই অংশটি নিষ্ক্রিয় বা ধীর গতিতে কাজ করে, তখন মানুষের জড়তা এবং ভয় কমতে শুরু করে। যে কাজগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় কঠিন মনে হতো, নেশার ঘোরে তা সহজ হয়ে যায়। এ কারণেই মদ্যপানের পর অনেকে বেশি খোলামেলা কথা বলেন, জোরে হাসেন এবং অনেক সময় এমন কথাও বলে ফেলেন যা স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো তাঁরা কোনোদিন বলতেন না।

মুক্তি পায় ‘হ্যাপি হরমোন’

এছাড়াও, মদ ডোপামিন নামক ‘হ্যাপি হরমোন’-এর নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ব্যক্তি নিজেকে খুশি, আত্মবিশ্বাসী এবং সন্তুষ্ট মনে করে। এই সময় তার মনে হয় যে সে অত্যন্ত ইতিবাচক এবং নির্ভীক হয়ে উঠেছে, যেন সে যেকোনো কিছু করে ফেলতে পারে।

তবে এই ‘আত্মবিশ্বাস’ কিন্তু একেবারেই বাস্তব নয়। যখনই মদের ঘোর কাটতে শুরু করে, ডোপামিনের মাত্রা কমতে থাকে, গাবা-এর কার্যকলাপ স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং মস্তিষ্ক আবার তার আসল অবস্থায় ফিরে আসে। তখনই অনেকের হুঁশ হয় যে নেশার ঘোরে তাঁরা যা বলেছেন বা করেছেন, তা সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস নয়, বরং রাসায়নিকের ভারসাম্যের ফলের সাময়িক প্রভাব ছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *