অবিশ্বাস্য! এই ধনী দেশে নেই বিমানবন্দর, ছাপে না টাকা, তবুও বিশ্বের সেরা ধনীদের অন্যতম যে দেশ! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

ইউরোপের বুকে এক আশ্চর্য দেশ, লিচেনস্টাইন। যে কোনো দেশের সাফল্য সাধারণত নির্ধারিত হয় তার সামরিক শক্তি, বিশাল ভূখণ্ড বা অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ওপর। কিন্তু এই ছোট্ট দেশটি সেই ধারণাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। সীমিত সম্পদ নিয়েও লিচেনস্টাইন শুধু সমৃদ্ধই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল ও ধনী দেশগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই বাস্তব!

এই দেশটি না তৈরি করে নিজেদের মুদ্রা, না আছে কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, তবুও বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের রেকর্ড এদের পকেটে। লিচেনস্টাইনের সাফল্যের মূলমন্ত্র হলো নিজেদের যা আছে, তার যথাযথ ব্যবহার করা।

অধিকাংশ দেশ যেখানে নিজেদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক—যেমন নিজস্ব মুদ্রা, ভাষা এবং জাতীয় বিমান সংস্থা—সাবধানে রক্ষা করে, সেখানে লিচেনস্টাইন নিয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত পথ। তারা প্রতিবেশী সুইজারল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে একটি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়: “যদি ধার নিয়ে কোনো কাজ আরও ভালোভাবে চালানো যায়, তাহলে কেন নয়?”

নিজের মুদ্রা ছাপানোর পরিবর্তে, দেশটি সুইস ফ্রাঙ্ককে গ্রহণ করেছে, যা একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক কাঠামো দিয়েছে। এই পদক্ষেপের কারণে লিচেনস্টাইনকে ব্যয়বহুল কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা মুদ্রা ব্যবস্থাপনার ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলেছে। একইভাবে, বিমানবন্দর তৈরি না করে, তারা সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার পরিবহন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছে, ফলে সাশ্রয় হয়েছে কোটি কোটি ডলার।

লিচেনস্টাইনকে যখন ধনী ইউরোপীয় দেশ হিসেবে দেখা হয়, তখন অনেকে গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কথা ভাবেন। কিন্তু লিচেনস্টাইনের আসল শক্তি লুকিয়ে আছে শিল্প এবং উদ্ভাবনে। ডেন্টাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত মাইক্রো-ড্রিল থেকে শুরু করে অ্যারোস্পেস প্রযুক্তি এবং স্বয়ংক্রিয় গাড়ির যন্ত্রাংশ পর্যন্ত—সবকিছুর উৎপাদনেই এই দেশটি নির্ভুল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বসেরা। নির্মাণ সরঞ্জামের বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় সংস্থা ‘হিল্টি’ লিচেনস্টাইনের শিল্প-শক্তির একটি বড় প্রমাণ।

এখানে নিবন্ধিত কো ম্পা নির সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এর ফলস্বরূপ, বেকারত্ব প্রায় শূন্য এবং নাগরিকদের আয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি লিচেনস্টাইন সামাজিকভাবেও স্থিতিশীল। দেশের কার্যত কোনো ঋণ নেই, এবং সরকার রাজস্ব উদ্বৃত্তে চলছে। সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো, গোটা দেশে প্রায় কোনো বন্দী নেই। জনগণের পারস্পরিক আস্থা এতটাই বেশি যে, এখানকার নাগরিকেরা রাতে দরজা বন্ধ করেন না। এটি শুধু ধন-সম্পদের প্রতীক নয়, উচ্চ স্তরের নিরাপত্তা ও শান্তিরও প্রতীক। যখন বিশ্বের অন্যান্য অংশে অপরাধ এবং নিরাপত্তাহীনতা মাথাচাড়া দিচ্ছে, তখন লিচেনস্টাইন প্রমাণ করে দিয়েছে যে, প্রকৃত সমৃদ্ধি হলো নির্ভয়ে জীবনযাপন করার মধ্যেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *