সমকামীতা কী? জেনে নিন কেন এই সম্পর্কের প্রবণতা প্রধান শহরগুলিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনে সম্পর্কের সমীকরণও পাল্টে যাচ্ছে। বিশেষ করে দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু-র মতো ব্যস্ত মহানগরগুলিতে, যেখানে কেরিয়ার ও অস্তিত্বের লড়াই নিত্যদিনের, সেখানে সম্পর্ক প্রায়শই নতুন মোড় নিচ্ছে।

আর এই পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটেই সম্প্রতি একটি নতুন ও কিছুটা অদ্ভুত শব্দবন্ধের চল হয়েছে— ‘হোবোসেক্সুয়ালিটি’ (Hobosexuality)

প্রথমেই স্পষ্ট করে বলা দরকার, এটি কোনো যৌন অভিমুখিতা (Sexual Orientation) নয়। এই শব্দটি একটি বিশেষ পরিস্থিতিকে বোঝায়, যেখানে একজন ব্যক্তি অন্য কারও সঙ্গে শুধুমাত্র একটি থাকার জায়গা বা আশ্রয় পাওয়ার উদ্দেশ্যে রোম্যান্টিক সম্পর্কে জড়ায়। এটি ভালোবাসার সম্পর্ক নয়, বরং সুবিধাবাদ ও স্বার্থের একটি চুক্তি।

তাহলে ঠিক কী এই ‘হোবোসেক্সুয়ালিটি’?

শব্দটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত— ‘হোবো’ (Hobo), যার অর্থ এমন একজন ব্যক্তি যার থাকার কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই, এবং ‘সেক্সুয়ালিটি’।

সরল ভাষায়, যখন কোনো ব্যক্তি অন্য একজনের সঙ্গে শুধুমাত্র এই কারণে সম্পর্কে আসে যাতে সে তার বাড়িতে থাকতে পারে, মাসিক ভাড়া বাঁচাতে পারে এবং খাওয়া-দাওয়ার মতো মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ করতে পারে, তখন সেই ধরনের সম্পর্ককে ‘হোবোসেক্সুয়ালিটি’ বলা হয়। এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে একজনের উদ্দেশ্য ভালোবাসা বা মানসিক সংযোগ তৈরি করা নয়, বরং শুধু একটি ছাদ খুঁজে নেওয়া। এটি এক ধরনের সুযোগসন্ধানী সম্পর্ক।

মহানগরে কেন বাড়ছে এই প্রবণতা?

আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, এই প্রবণতা মূলত বড় শহরগুলিতেই বেশি দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে কিছু স্পষ্ট আর্থ-সামাজিক কারণ:

  • আকাশছোঁয়া ভাড়া ও মূল্যবৃদ্ধি: বড় শহরগুলিতে জীবনধারণের খরচ অত্যন্ত বেশি। একটি ভালো বাড়ি ভাড়া নেওয়া অনেকের সাধ্যের বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে, কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে ‘লিভ-ইন’ করাটা অনেকের কাছে একটি সহজ ‘জুতা’ হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলে তাদের বাড়ি ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ সাশ্রয় হয়।
  • আর্থিক অনিশ্চয়তা: আজকের চাকরির বাজারে নিশ্চয়তা কম। আর্থিক সঙ্কটের সময় কেউ কেউ আবেগের আড়ালের মধ্যে এমন একজন সঙ্গীর সন্ধান করেন যিনি তাদের অর্থনৈতিক ও শারীরিকভাবে একটি আশ্রয় দিতে পারেন।
  • একাকীত্ব ও সুবিধার মিশ্রণ: শহরের ভিড়ের মাঝেও একাকীত্ব এক নির্মম বাস্তবতা। একজন ‘হোবোসেক্সুয়াল’ ব্যক্তি অন্যজনের এই একাকীত্বের সুযোগ নেয়। সে সাময়িক সঙ্গ, মানসিক নাটকীয়তা ও শারীরিক ঘনিষ্ঠতা দেয় এবং বিনিময়ে থাকার সুবিধা আদায় করে নেয়।
  • দায়বদ্ধতা এড়িয়ে চলা: এটি একপ্রকার ‘সিচুয়েশনশিপ’, যেখানে ভবিষ্যতের কোনো গুরুতর প্রতিশ্রুতি বা পরিকল্পনা থাকে না। যখনই ‘হোবোসেক্সুয়াল’ ব্যক্তির উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যায় (যেমন, নতুন চাকরি বা ভালো থাকার জায়গা পাওয়া), তখনই সে সম্পর্কটি ভেঙে দিয়ে এগিয়ে যায়।

এই প্রবণতা সম্পর্কের মধ্যে সুযোগসন্ধানী মনোভাব ও সততার অভাবকে তুলে ধরে। যে ব্যক্তি আবেগগতভাবে সম্পর্কটিতে যুক্ত থাকেন, তার জন্য এটি খুবই বেদনাদায়ক হতে পারে। তাই, যেকোনো নতুন সম্পর্কে প্রবেশের আগে সঙ্গীর উদ্দেশ্য ভালোভাবে বোঝা এবং এই ধরনের ‘রেড ফ্ল্যাগ’ বা বিপদচিহ্নগুলি চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি। সত্যিকারের সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা ও সততার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, কোনো সুবিধা বা ‘জুতা’-র ওপর নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *