রিয়েল লাইফ টাইম ট্রাভেল: পৃথিবীর সেই জায়গা যেখানে ঘড়ি নষ্ট হয়ে যায়, আজ এক ঘন্টার মধ্যে আগামীকাল হয়ে যায়! – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
টাইম ট্রাভেলের স্বপ্ন যদি কখনো দেখে থাকেন, তবে আর্কটিকের ঠাণ্ডা জলে লুকিয়ে থাকা এই দুই ছোট্ট দ্বীপের গল্প আপনাকে চমকে দেবে। মাত্র ৩.৮ কিলোমিটারের দূরত্বে অবস্থিত—আমেরিকার ‘লিটল ডায়োমেড আইল্যান্ড’ এবং রাশিয়ার ‘বিগ ডায়োমেড আইল্যান্ড’। অথচ, এই সামান্য ব্যবধানেই সময়ের ফারাক ২১ থেকে ২৪ ঘণ্টার! অর্থাৎ, এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে যেতে আপনার সময় লাগছে মাত্র এক ঘণ্টা, কিন্তু আপনি পৌঁছে যাচ্ছেন পুরোপুরি একদিন পরের তারিখে!
আসলে কী ঘটেছে? আন্তর্জাতিক ডেট লাইন (International Date Line)-এর সৌজন্যেই এই ভৌগোলিক বিস্ময় তৈরি হয়েছে। যদি লিটল ডায়োমেড-এ আজ বুধবার হয়, তবে বিগ ডায়োমেড-এ তখন কিন্তু বৃহস্পতিবার হয়ে গেছে। এই কারণেই দ্বীপ দুটিকে স্থানীয়ভাবে ‘ইয়েস্টারডে আইল্যান্ড’ (গতকাল দ্বীপ) এবং ‘টুমরো আইল্যান্ড’ (আগামীকাল দ্বীপ) নামে ডাকা হয়। সম্প্রতি একটি নতুন তথ্যচিত্র এই অদ্ভুত ঘটনাটিকে আবার আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে, যেখানে বলা হয়েছে কীভাবে এই দ্বীপগুলো সময়ের স্বাভাবিক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যে বিভক্ত সময় এই দ্বীপগুলি আর্কটিক মহাসাগরের বেরিং স্ট্রেইটে অবস্থিত, যেখানে একদিকে আমেরিকার আলাস্কা এবং অন্যদিকে রাশিয়ার চুকোটকা উপদ্বীপ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। স্থানীয় ইনুপিয়াক ভাষায় ‘ইংগালিন’ নামে পরিচিত লিটল ডায়োমেড হল মার্কিন আলাস্কার অংশ। এখানে মাত্র ৮২ জনের বসবাস, যাদের বেশিরভাগই স্থানীয় ইউপিক উপজাতির মানুষ। এখানকার অর্থনীতি মাছ ধরা, সীল শিকার ও বরফের ওপর মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। এটি ইউটিসি-৯ (UTC-9) টাইম জোনে পড়ে।
অন্যদিকে, রাশিয়ায় র্যাটম্যানভ আইল্যান্ড নামে পরিচিত বিগ ডায়োমেড হল রুশ চুকোটকা স্বশাসিত অঞ্চলের অংশ। এখানে মূলত সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং প্রায় ১০০ জন সামরিক কর্মী ও বিজ্ঞানী বসবাস করেন। এটি ইউটিসি+১২ (UTC+12) টাইম জোনে পড়ে, যা লিটল ডায়োমেডের চেয়ে গ্রীষ্মকালে ২০ ঘণ্টা এবং অন্যান্য সময়ে ২১ ঘণ্টা এগিয়ে থাকে। এর ফলে, আপনি লিটল ডায়োমেড থেকে বিগ ডায়োমেড-এ এক কদম ফেললেই শুধু দেশ পরিবর্তন হবে না, তারিখও একদিন এগিয়ে যাবে।
ইতিহাসে এর শিকড় এই সময় পার্থক্যের সূত্রপাত ইতিহাসের গভীরে। ড্যানিশ অভিযাত্রী ভিটাস বেরিং ১৭২৮ সালে এই দ্বীপগুলি আবিষ্কার করেন এবং গ্রিক সন্ত ডায়োমেডের নামে দ্বীপগুলির নামকরণ করেন। হাজার হাজার বছর ধরে ইউপিক এবং ইংলীত আদিবাসীরা এখানে বাস করে আসছেন। ১৮৬৭ সালে রাশিয়া যখন ৭.২ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে আলাস্কাকে আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দেয়, তখন বিগ ডায়োমেড রাশিয়ার অধীনেই থেকে যায়। ১৮৮৪ সালে যখন আন্তর্জাতিক ডেট লাইন নির্ধারণ করা হয়, তখন তা এই দুই দ্বীপের মাঝখান দিয়ে টানা হয়, যা এদেরকে ‘সময়ের সেতু’তে পরিণত করে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় এই স্থানটি ‘আইস কার্টেন’ বা আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল।
অসাধ্য ভ্রমণপথ এই অঞ্চলে এখনও সীমান্ত কঠোর। এখানে ভ্রমণ করা সহজ নয়। লিটল ডায়োমেড-এ পৌঁছাতে হলে আলাস্কার নোম থেকে হেলিকপ্টার বা ছোট নৌকার সাহায্য নিতে হয়, যা পুরোপুরি আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। যদিও শীতে বরফের সেতু তৈরি হয়, তবে সেটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। অন্যদিকে, বিগ ডায়োমেড-এ যাওয়া আরও কঠিন। রাশিয়ান ভিসা ও সামরিক অনুমতি ছাড়া সেখানে প্রবেশ করা যায় না। যদিও পর্যটকদের জন্য কোনো নিয়মিত ট্যুর নেই, তবুও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এটি যেন এক ‘টাইম ট্রাভেল ট্রেক’-এর স্বপ্ন।