ভালোবাসার এমন পরিণতি! কিডনির জন্য বিয়ে, তার পর আসল ঘটনা জানলে চোখ কপালে উঠবে – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কিডনির সন্ধানে এক অপরূপ ভালোবাসার জন্ম, চীনের ওয়াং শিয়াও এবং ইউ জিয়ানপিং-এর এই অবিশ্বাস্য কাহিনি আজ আবেগে ভাসিয়ে দিচ্ছে লাখো মানুষকে। যেখানে সামান্য কারণে সম্পর্ক ভেঙে যায়, সেখানে জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে এই যুগলের প্রেম দেখাল, প্রকৃত বিশ্বাস আর ভালোবাসা থাকলে বড় বিপদও হার মানে।
চিনের শানসি প্রদেশের বাসিন্দা ২৪ বছর বয়সী ওয়াং শিয়াও ইউরেমিয়া নামের এক গুরুতর কিডনি রোগে ভুগছিলেন। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবর অনুযায়ী, দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন না হলে তিনি হয়তো আর এক বছরও বাঁচবেন না, এমনটাই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু প্রতিস্থাপনের জন্য যেমন টাকা ছিল না, তেমনই দাতা মেলাও ছিল প্রায় আসাম্ভব। তখনই হাসপাতালের এক রোগী ওয়াংকে পরামর্শ দেন, তিনি যেন এমন কাউকে বিয়ে করেন, যিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন, যাতে তাঁর মৃত্যুর পর সেই কিডনি তিনি পেতে পারেন।
“আমি শুধু বাঁচতে চাই”
জীবন বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওয়াং একটি ক্যানসার সাপোর্ট গ্রুপে বিয়ের বিজ্ঞাপন দেন। তিনি লেখেন, “আমি বিয়ের পর আপনার সম্পূর্ণ যত্ন নেব। কেউ দয়া করে আমাকে বিয়ে করুন, আর আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি শুধু বাঁচতে চাই।” তাঁর এই আবেগপূর্ণ বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন দেওয়ার কিছুদিন পরেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন ২৭ বছর বয়সী ইউ জিয়ানপিং। ইউ নিজেও মাইলোমা অর্থাৎ অস্থি মজ্জার ক্যানসারে ভুগছিলেন। তাঁর একাধিক চিকিৎসা ব্যর্থ হয়েছে এবং পরিবারও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ছিল। যেহেতু দুজনের রক্তের গ্রুপ মিলে গিয়েছিল, তাই এই সম্পর্কটি বাস্তবিকভাবেও সম্ভব ছিল।
২০১৩ সালের জুলাই মাসে তাঁরা গোপনে বিয়ে করেন। তাঁদের মধ্যে চুক্তি হয়, ইউ-এর মৃত্যুর পর ওয়াং তাঁর কিডনি নেবেন। বিনিময়ে ওয়াং ইউ-এর সেবা করবেন এবং তাঁর বৃদ্ধ বাবারও খেয়াল রাখবেন।
বাধ্য হয়ে শুরু, তার পর যা ঘটল…
সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সম্পর্ক নিছক বাধ্যবাধকতা থেকে গভীর প্রেমে পরিণত হয়। ওয়াং-এর প্রাণোচ্ছল স্বভাব ইউ-এর বিষণ্ণ মুখে হাসি এনে দেয়। ইউ তাঁর জন্য রান্না শুরু করেন, আর ওয়াং সব সময় তাঁর চিকিৎসার সময় সঙ্গে থাকতেন। তাঁরা প্রতিদিন নিজেদের শরীরের অবস্থা এবং জীবনের কথা ভাগ করে নিতেন।
এদিকে ইউ-এর চিকিৎসার জন্য অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়ে, যার জন্য অনেক টাকা দরকার ছিল। ওয়াং সিদ্ধান্ত নেন, তিনি নিজেই টাকা জোগাড় করবেন। তিনি রাস্তার ধারে ফুলের স্টল দেন এবং প্রতিটি তোড়ার সঙ্গে একটি কার্ড রাখতেন, যেখানে তাঁদের গল্প লেখা থাকত। তাঁদের সততা ও সাহসে মুগ্ধ হয়ে বহু মানুষ ফুল কিনতে শুরু করেন। এভাবেই তাঁরা প্রায় ৫ লাখ ইউয়ান (প্রায় ৭০,০০০ মার্কিন ডলার) সংগ্রহ করেন, যা ইউ-এর অস্ত্রোপচারের জন্য যথেষ্ট ছিল।
ভাগ্য বদলে দিল খেলা
কিছুদিন পর দুজনের স্বাস্থ্যেরই উন্নতি হতে শুরু করে। ইউ-এর রোগ স্থিতিশীল হয়, আর ওয়াং-এর ডায়ালিসিসের প্রয়োজন কমতে থাকে। চিকিৎসকরা জানান, সম্ভবত ওয়াং-এর আর কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হবে না। এই খবরটি দুজনের কাছেই ছিল অলৌকিকের চেয়ে কম কিছু নয়।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা নতুন জীবন উদযাপন করতে বিয়ের ভোজের আয়োজন করেন। যেখানে তাঁদের প্রথম বিয়ে হয়েছিল মৃত্যুর ভয়ে, এই অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় জীবনের জয়ের উৎসবে। তাঁদের অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি নিয়ে পরে তৈরি হয় “ভিভা লা ভিডা” নামের একটি চলচ্চিত্র, যা ২০২৪ সালে চীনে মুক্তি পায়। ছবিটি ২ কোটি ৭৬ লাখ ইউয়ান (প্রায় ৩৮ মিলিয়ন ডলার) আয় করে সুপারহিট হয়েছিল।
আজ এই দম্পতি শানসি প্রদেশের শিয়ান শহরে একটি ফুলের দোকান চালান। তাঁরা দুজনেই সুস্থ, হাসিখুশি এবং শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করছেন, যেমনটা তাঁরা স্বপ্নে দেখেছিলেন। তাঁদের এই যাত্রা সম্পর্কে একজন অনলাইন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “যে বিয়ে হয়েছিল বাধ্য হয়ে, সেটাই সত্যিকারের ভালোবাসার এক অলৌকিক কাহিনি হয়ে গেল।”