লাখো কর্মীর বেতন-পেনশন নিয়ে বড় খবর! কমিশনের ‘টার্মস অফ রেফারেন্স’ আসলে কী? জানুন সবকিছু – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় ৫০ লক্ষের বেশি কর্মচারী এবং ৭০ লক্ষ পেনশনভোগীর জন্য এলো এক বড় সুসংবাদ। বহু প্রতীক্ষিত অষ্টম বেতন কমিশন (8th Central Pay Commission) গঠনের আনুষ্ঠানিক পথ পরিষ্কার করল কেন্দ্র। মন্ত্রিসভা এই কমিশনের ‘টার্মস অফ রেফারেন্স’ অর্থাৎ কাজের নিয়ম ও পরিসরে অনুমোদন দিয়েছে, যার ফলে এবার বেতন, ভাতা এবং পেনশন পুনর্মূল্যায়নের কাজ শুরু হতে চলেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে কর্মীদের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগছে—বেতন কি সত্যি বাড়বে? আর ‘টার্মস অফ রেফারেন্স’ বা ToR বলতে ঠিক কী বোঝায়?
‘টার্মস অফ রেফারেন্স’ কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সহজ কথায়, টার্মস অফ রেফারেন্স (ToR) হলো সেই মূল নির্দেশিকা বা নথি, যা বেতন কমিশনকে নির্দিষ্ট করে দেয় কোন কোন বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে এবং তার কাজের সীমা কতটুকু। এই কমিশন এখন মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খতিয়ে দেখবে:
- বেতন কাঠামো পর্যালোচনা: বর্তমানে যে বেতনের কাঠামো আছে, তা এই সময়ের জন্য কতটা উপযুক্ত?
- অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও মূল্যবৃদ্ধি: মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন ও ভাতার কী কী পরিবর্তন প্রয়োজন?
- ভবিষ্যৎ বেতন ও পেনশন: আগামী দিনে কর্মচারীদের কতটা বেতন এবং অবসরপ্রাপ্তদের কতটা পেনশন হওয়া উচিত।
- তুলনামূলক বিশ্লেষণ: সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে বেতনের মধ্যে সমতা আনতে একটি তুলনামূলক পর্যালোচনাও করা হবে।
কীভাবে কাজ করবে অষ্টম বেতন কমিশন?
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, অষ্টম বেতন কমিশন হবে তিন সদস্যের একটি অস্থায়ী সংস্থা। এতে থাকবেন একজন চেয়ারপার্সন, একজন পার্ট-টাইম সদস্য এবং একজন সচিব। কমিশন ১৮ মাসের মধ্যে তাদের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেবে। প্রয়োজন মনে করলে তারা এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্টও পেশ করতে পারে।
সাধারণত প্রথা মেনে, এই কমিশনের সুপারিশগুলি ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা, কারণ প্রতি দশ বছরের ব্যবধানে নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হয়।
কারা পাবেন এই সুবিধা?
এই কমিশনের সুবিধাভোগীদের তালিকায় থাকছেন:
- কেন্দ্রীয় সরকারের সকল কর্মচারী।
- প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
- রেলওয়ের কর্মীরা।
- কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনী (CAPF)-এর জওয়ানরা।
- স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
পাশাপাশি, পূর্বের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি পেনশনভোগীদের পেনশনও নতুন বেতন কাঠামোর ভিত্তিতে সংশোধন করা হবে।
বেতন কতটা বাড়তে পারে?
মূল প্রশ্ন হলো, বেতন কি বাড়বে? উত্তর হলো, হ্যাঁ, বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ প্রতিবারই নতুন বেতন কমিশনে কর্মীদের মূল বেতন (basic pay) বাড়ানো হয়। সপ্তম বেতন কমিশন ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর (fitment factor) দিয়ে বেতন নির্ধারণ করেছিল। এবার কর্মচারীরা আশা করছেন, এই অনুপাত আরও কিছুটা বাড়বে, যা তাদের মাসিক বেতনে বড়সড় বৃদ্ধি ঘটাবে। পেনশনভোগীদের পেনশনও নতুন কাঠামোর ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। তবে সরকারের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টির উপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য আশার আলো?
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের মনেও নতুন আশা জাগিয়েছে। কারণ অতীতে দেখা গেছে, অনেক রাজ্য সরকারই সামান্য পরিবর্তন করে কেন্দ্রের বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি গ্রহণ করে। সেই হিসাবে, ধীরে ধীরে রাজ্য সরকারি কর্মীরাও এর সুবিধা পেতে পারেন। এই সুবিধা পাওয়ার জন্য কর্মীদের আলাদা করে কোনো আবেদন করতে হবে না। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তি জারি হলেই নতুন সংশোধিত বেতন ও পেনশন কাঠামো কার্যকর হয়ে যাবে।
সব মিলিয়ে, অষ্টম বেতন কমিশন শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, এটি মূল্যবৃদ্ধির বাজারে লক্ষ লক্ষ পরিবারের জন্য নতুন আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং আশার প্রতীক।