৪০-এর পরে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ধরে রাখার ‘পঞ্চসূত্র’ কী? জানুন, নাহলে হতে পারে বড় বিপদ – এবেলা
এবেলা ডেস্কঃ
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং চিন্তার গতিতে। তবে আধুনিক গবেষণা বলছে, দৈনন্দিন জীবনে কিছু সহজ এবং স্থির অভ্যাস মেনে চললে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপর তার বিশাল ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্ষয়কে বিলম্বিত করতে হলে ৪০ বছর বয়সের পর একটি ভালো জীবনধারা বেছে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মস্তিষ্ককে সচল ও তীক্ষ্ণ রাখার জন্য এখানে ৫টি শক্তিশালী অভ্যাস তুলে ধরা হলো:
১. প্রতিদিন শরীরচর্চা করুন
নিয়মিত ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা নতুন নিউরনের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটলেও মানসিক অবস্থা ও স্মৃতিশক্তির উন্নতি হয় এবং মস্তিষ্কের বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ধীর হয়। ব্যায়ামের ফলে “ব্রেন ডিরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF)”-এর মতো মস্তিষ্ক-সুরক্ষাকারী প্রোটিন মুক্তি পায়, যা শেখা ও স্মৃতিকে শক্তিশালী করে।
২. ‘ব্রেন ফুড’ বা মস্তিষ্কের জন্য ভালো খাবার খান
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিনের মতো কিছু পুষ্টি উপাদান মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে এগুলিকে দৈনন্দিন খাদ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যে ওমেগা-৩-এর উচ্চ মাত্রা মস্তিষ্কের আকার বাড়াতে সাহায্য করে—বিশেষত হিপ্পোক্যাম্পাস (স্মৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ) অংশে। তৈলাক্ত মাছ, আখরোট, ব্লুবেরি এবং সবুজ শাকসবজি খাওয়া উচিত। এগুলি মস্তিষ্কের প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, যা জ্ঞানীয় অবনতির কারণ।
৩. মস্তিষ্ককে নিয়মিত কাজ দিন
আপনার মস্তিষ্ককে সচল রাখলে তার ‘প্লাস্টিসিটি’ বা নমনীয়তা বজায় থাকে। ধাঁধা সমাধান করুন, নতুন দক্ষতা শিখুন, অথবা বই পড়ুন—এই ধরনের অভ্যাসগুলি নিউরাল সংযোগগুলিকে শক্তিশালী করে এবং সময়ের সাথে সাথে মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ রাখে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নতুন দক্ষতা শিখেছেন, তাদের দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে।
৪. ৭-৮ ঘণ্টা মানসম্পন্ন ঘুম আবশ্যক
প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ভালো মানের ঘুম পুরো স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ঘুম স্মৃতিকে সুসংহত করে এবং মস্তিষ্ক থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। অপর্যাপ্ত ঘুম আলঝেইমার্স রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ঘুমের সময়, বিশেষত নন-REM ঘুমের পর্যায়ে মস্তিষ্ক স্মৃতিগুলিকে পুনরায় সক্রিয় করার মাধ্যমে স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করে।
৫. সামাজিক সংযোগ ও সম্পর্কের দিকে নজর দিন
অর্থপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক ও মিথস্ক্রিয়া স্ট্রেস কমায় এবং মানসিক সুস্থতা বাড়ায়। এটি জ্ঞানীয় পতন থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। তাই ইতিবাচক বন্ধু, পরিবার এবং সামাজিক গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত থাকুন। এটি মস্তিষ্কের সেই অঞ্চলগুলিকে উদ্দীপিত করে যা আবেগিক এবং জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলির জন্য দায়ী। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, যারা অন্যদের তুলনায় মাঝারি স্তরের সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ভোগেন, তাদের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি ২২% কম।