রাতে মেখে রাখা বাসি আটা কি সত্যিই বিষ? গোপন সত্যি ফাঁস করলেন বিশেষজ্ঞরা – এবেলা

এবেলা ডেস্কঃ

কর্মব্যস্ত জীবনে সময় বাঁচানোর জন্য প্রায় প্রতিটি ভারতীয় পরিবারেই একটি অভ্যাস খুব প্রচলিত—রাতে বেঁচে যাওয়া মাখা আটা ফ্রিজে রেখে দেওয়া এবং পরের দিন সকালে তা দিয়ে রুটি বা পরোটা তৈরি করা। এই অভ্যাস একদিকে যেমন খাদ্যের অপচয় কমায়, তেমনই সকালের রান্নাঘরের কাজও সহজ করে। কিন্তু আপনি যে আটা নির্দ্বিধায় ব্যবহার করছেন, তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা নিরাপদ? এই প্রশ্নটি কিন্তু অনেকের মনেই জাগে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাস একেবারে ভুল নয়, তবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনে চলা আবশ্যক। খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও ডায়েটিশিয়ানরা জানাচ্ছেন, আটা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার কম তাপমাত্রায় ফ্রিজে রাখলে তাতে থাকা অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি অত্যন্ত ধীর গতিতে হয়। অর্থাৎ, ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি সম্পূর্ণভাবে থেমে না গেলেও, তাদের কার্যকলাপ কমে যায়, ফলে কিছুক্ষণের জন্য আটা ব্যবহারযোগ্য থাকে।

পুষ্টির তারতম্য কতটা?

তাৎক্ষণিক সুবিধার জন্য মাখা আটা ফ্রিজে রাখলে পুষ্টিগত মান কতটা কমে, তা নিয়ে অনেকের সংশয় থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতে মেখে রাখা আটা এবং সদ্য মাখা আটার মধ্যে পুষ্টির খুব বড় পার্থক্য হয় না। যদিও ভিটামিন সি, ফোলেট এবং পলিফেনলের মতো কিছু পুষ্টি উপাদান সামান্য কমতে পারে, তবে এই পরিবর্তনগুলি স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলার মতো নয়। বিশেষ করে যারা কর্মজীবী বা একা থাকেন, তাদের জন্য এয়ারটাইট পাত্রে আটা সংরক্ষণ করা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।

তবে সুরক্ষার বিষয়টি কেবল ফ্রিজের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে না, আটা মাখা এবং সংরক্ষণের পদ্ধতিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি পরিষ্কার ও বায়ুরোধী (এয়ারটাইট) পাত্রে আটা রাখা হয়, তবে সেটি ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত নিরাপদে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ফ্রিজে রাখা আটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ফ্রিজের ঠাণ্ডা তাপমাত্রা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে কেবল ধীর করে, পুরোপুরি ধ্বংস করে না। সেই কারণেই ১২ ঘণ্টা পার হওয়ার পর থেকে আটার স্বাদ, রঙ এবং গন্ধে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এই পরিবর্তনগুলিই ইঙ্গিত দেয় যে আটা খারাপ হতে শুরু করেছে। এই ধরনের বাসি আটা খেলে পেটের সমস্যা এমনকি ফুড পয়জনিংও হতে পারে।

আটা নিরাপদে ব্যবহারের ৫টি সহজ টিপস

১. সময়সীমা মানুন: বেঁচে যাওয়া আটা ৮ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ব্যবহার করে ফেলা সবচেয়ে নিরাপদ। ২৪ ঘণ্টার বেশি পুরনো আটা কখনোই ব্যবহার করবেন না।

২. এয়ারটাইট পাত্র: আটা সবসময় পরিষ্কার এবং বায়ুরোধী পাত্রে (এয়ারটাইট কন্টেইনার) ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। এতে বাইরের গন্ধ বা আর্দ্রতা থেকে আটা সুরক্ষিত থাকবে।

৩. গন্ধ ও রঙের পরীক্ষা: রুটি বানানোর আগে আটা ভালোভাবে শুঁকে দেখুন এবং রঙ পরীক্ষা করুন। গন্ধ, রঙ বা স্বাদে সামান্য পরিবর্তন দেখলেই তা ফেলে দিন।

৪. ফ্রIDGE-এর তাপমাত্রা: ফ্রিজের তাপমাত্রা অবশ্যই ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে রাখুন। এতে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি সবচেয়ে কম হয়।

৫. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: আটা মাখার আগে হাত, বাসন এবং যে জায়গায় আটা মাখা হচ্ছে, সেই স্থানটি পুরোপুরি পরিষ্কার রাখা অপরিহার্য। এটি জীবাণুর সংক্রমণ কমায়।

সঠিকভাবে এবং সতর্কতার সাথে সংরক্ষণ করলে রাতে মেখে রাখা আটা ব্যবহার করে আপনি যেমন সময় বাঁচাতে পারবেন, তেমনই সুস্বাদু রুটিও তৈরি করতে পারবেন। মনে রাখবেন, খাদ্য সুরক্ষাই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *